স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘদিন পর সিলেটের রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে নামছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। একই দিনে সিলেট নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিকেল ৩টায় ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সিলেটের রাজপথে সর্বশেষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন খালেদা জিয়ার সাজার রায়কে কেন্দ্র করে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এরপর উভয় দল নানা ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করে গেলেও কখনো মুখোমুখি হয়নি। এরফলে আর কোনো রাজনৈতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেনি সিলেট নগরে।

তবে গত বছরের ৬ নভেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাতে নগরীর রিকাবীবাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের। কামালের মৃত্যুতে ওই রাতে বিএনপি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি নিয়ে শনিবার রাজপথে মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুপুর ২টায় রেজিস্ট্রারি মাঠে বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ বিএনপির ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশ সফলে ১৫দিন ধরে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক প্রচারণামূলক কর্মসূচি চালাচ্ছে। সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান। এছাড়া সমাবেশে জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন জেলা বিএনপির নেতারা।

গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শেষে সংক্ষিপ্ত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়নের স্ট্রিমরুলার চালাচ্ছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে বন্দি রেখেছে। মানুষ একদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত অসহনীয়ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করছে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। সার্বিক দিক বিবেচনায় দেশ আজ চরম সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এ সরকারের পতন নিশ্চিত করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এ জন্য যে কোনো মূল্যে সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে হবে।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা মতবিনিময় করেছেন। সমাবেশের বিষয়টি অবহিত করে দলটির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রথমে একই স্থানে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. মজির উদ্দিন স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেজিস্ট্রারি মাঠে অন্য আরও একটি দলের সমাবেশ থাকায় শনিবার বিকেল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।

সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নারী নেত্রী সৈয়দা জেবুন্নেছা হক উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, শান্তি সমাবেশ আয়োজন বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা নয়। কেন্দ্রের নির্দেশে আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি পালন করবে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ সফলে আমরা একযোগে কাজ করছি। শনিবার যথাসময়ে ঐতিহাসিক সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে আমরা বিভাগীয় সমাবেশ করবো। সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ এ সমাবেশে যোগ দিয়ে এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালি পংকী বলেন, সিলেটের রাজনীতিতে সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা আশাবাদী এটা কেউ নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। যার যার কর্মসূচি যার যার মতো করে পালন করবেন। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সেটি মোকাবিলা করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের কর্মসূচি সফল করবে। আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে খুলনায়ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুপুর ২টায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক সংলগ্ন কেসিসি মার্কেট এলাকায় বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে নগরীর শিববাড়ী মোড় এলাকায় শান্তি সমাবেশ করবে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ।

(ওএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩)