পা দিয়ে লিখে আলিম পরীক্ষায় ৪.৫৭ পেলেন হাবিব

একে আজাদ ও মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : দুই হাত নেই পা দিয়ে লিখে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (১৯)। হাবিব রাজবাড়ী কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদের ছেলে। সে পাংশার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা থেকে পা দিয়ে লিখে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য জানান মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহম্মেদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান। চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সে। বড় দুই বোনের বিয়ে হলেও পরিবারে রয়েছে ছোট বোন। সেও পড়াশুনা করে। জন্মগতভাবেই হাতবিহীন হাবিব। ছোট বেলায় বাবা-মা, চাচা ও পরিবারের অন্যদের অনুপ্রেরণায় পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে প্রবেশ করে। শিক্ষা জীবনের প্রথম স্তরেই সে কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখে পিএসসিতে ৪.৬৭ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেন। এরপর শুরু হয় মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় স্তর। এরপর পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৬১ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেন।পরবর্তীতে আর পেছন ফিরে না তাকিয়ে একই মাদরাসা থেকে ২০১৯ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পান জিপিএ ৪.৬৩।
হাবিবুর রহমান বলেন,ছোট বেলা থেকেই আমি শারিরীক প্রতিবন্ধী। দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আজ আমি আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এ পর্যন্ত আসতে আমার অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে। নানান জন নানান কথা বলেছে। কিন্তু আমি তাতে কান দেই নি। নিজের আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তির কারণে আজ আমি এতদূর এসেছি। আমার ইচ্ছা ছিলো জিপিএ-৫ পাবো। কিন্তু জিপিএ ৪.৫৭ পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। এখন আমার স্বপ্ন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া।এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পড়াশুনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
হাবিবুর রহমানের বড় দুলাভাই (ভগ্নিপতি) আনোয়ার হোসেন বলেন, হাবিব জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার মধ্যে অনেক প্রতিভা এবং আত্মবিশ্বাস রয়েছে। সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চায়।এজন্য সবার সহযোগীতা প্রয়োজন।
পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহম্মেদ বলেন, হাবিব কৃষক পরিবারের সন্তান। সে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দুই হাত নেই।সে পা দিয়ে লিখেই এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নেই। সে জিপিএ-৪.৫৭ পেয় উত্তীর্ণ হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা তাকে আটকে রাখতে পারেনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারনে সে আজ এতদূর পর্যন্ত এসেছে। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।
(একেএমজি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩)