নাটোর প্রতিনিধি : লাশ আর লাশ! ডানে বামে চারদিকে শুধু লাশ। এক লাশের উপর পরে আছে আরেক লাশ। একসঙ্গে এতো লাশ আর কখনও দেখেনি বড়াইগ্রামের মানুষ। বড়াইগ্রামতো বটেই, এতো বড় দুর্ঘটনা এবং একসঙ্গে এতো লাশ দেশের মানুষও খুব কমই দেখেছে। ৭১’ এর স্বাধীনতা যুদ্ধেও এতো লাশ দেখেনি এ এলাকার মানুষ। লাশের ভারে যেন নুব্জ হয়ে পড়েছে এ এলাকার মানুষ। এক সঙ্গে এতগুলো মানুষের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে কাঁদছে পুরো দুটি উপজেলা। গোটা এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম ।

জানা যায়, তিন বছর আগে গুরুদাসপুর উপজেলার শিধুলী গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন হত্যা মামলার আসামীরা নাটোর কোর্টে স্বাক্ষী দিয়ে অথৈ পরিবহণে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ঢাকার কোচ কেয়া পরিবহণ একটি ট্রাককে ওভারটেকিং করতে গিয়ে নাটোর থেকে গুরুদাসপুরগামী অথৈ পরিবহণের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৩৩ জন মারা গেছে। এলাকাবাসী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা লাশগুলো উদ্ধার করে বনপাড়া হাইওয়ে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নিহতের স্বজনেরা ঘটনাস্থলে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহতের নিকটাত্মীয়দের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এ এলাকার আকাশ-বাতাস। নিহতের আত্মীয়রাতো কাঁদছেই, তাদের ঘোরতর শত্রুরাও কাঁদছে। শিধুলী গ্রামের হত্যা মামলার বাদী আব্দুল হক আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, নিহতেরা আমার ভাই ডা. ইয়ারুল হকসহ দুজন হত্যা মামলার আসামী। তাদের সঙ্গে আমাদের মামলা চলছে। মামলায় যা হবার হতো, মেনে নিতাম। ফাঁসি হলেও খুশী হতাম। কিন্তু তাদের এমন করুণ মৃত্যু চাইনি।
বড়াইগ্রামের তারানগর গ্রামের কলেজ শিক্ষক জামাল উদ্দিন মেয়ে জান্নাতিকে ডাক্তার দেখাতে স্ত্রী জাকিয়াকে সহ গিয়েছিলেন নাটোরে। মেয়ের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েকে সহ চলে গেলেন না ফেরার দেশে, যেখানে আর কখনই কোন চিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না। স্ত্রী জাকিয়া গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ইন্দ্রাপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক জানমোহাম্মদ মেয়েকে নিয়ে নাটোর গিয়েছিলেন তার ছেলে টিপুর বিয়ের বাজার করতে। আগামী বৃহস্পতিবার টিপুর বিয়ের দিন ধার্য্য ছিল। কেনাকাটা সেরে অথৈ পরিবহণে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন জানমোহাম্মদ। কিন্তু ছেলের বিয়েতে অংশ নেয়া হলো না তার। বিয়ের আগেই চিরদিনের মত তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। খবর পেয়ে বিয়ের বাড়িতে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে কান্নার রোল।ন বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন বলেন, এতো লাশ রাখি কোথায় ! একের পর এক শুধু মৃত্যুর খবর। নিহতরাই ছিলেন এসব পরিবারের প্রধান। তাদের মৃত্যুতে এসব পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নিহতদের স্বজনদের বাঁধভাঙ্গা কান্না সব মানুষের অন্তরে অন্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা জেলা যেন শোকের গ্রামে পরিণত হয়েছে। বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. শরিফুন্নেসা আবেগমাখা কন্ঠে বলেন, জীবনে এক সঙ্গে এতো লাশ কখনও দেখিনি। সারা রাস্তাজুড়ে লাশ আর আহত ও নিহতদের কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য চোখে দেখা যায় না।
(এমআর/এসসি/অক্টোবর২১,২০১৪)