কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল গ্রামের বাসিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষককে হত্যার দায়ে কামরুল ইসলামকে (৩৮) হত্যার ঘটনার ১০ বছর পর ৫ জনকে অভিযুক্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম করাদণ্ড দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। 

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক শিহাবুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাদের প্রত্যেককে আবার তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরা হলেন, বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের চতুল গ্রামের বকুল মোল্যা (৩২), সুজা মোল্যা (৩৩), নজরুল মোল্যা (৫৫) ও দুই সহোদর ফিরোজ মোল্যা (৩৫) ও মঞ্জু মোল্যা (৩২)। রায় প্রদানের সময় আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। পরে পুলিশ প্রহরায় তাদের জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বিকেল তিনটার দিকে শিক্ষক কামরুল বাড়ি থেকে একটি বাইসাইকেলে করে বোয়ালমারী বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি উপজেলার চতুল ইউনিয়নের চতুল চিতাঘাটা এলাকায় মঞ্জু মোল্যার দোকানের সামনে পৌঁছলে উল্লিখিত পাঁচ ব্যাক্তিসহ মোট ১২জন স্থানীয় গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে কাঠের লাঠি, বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে কামরুলকে। এসময় ওই শিক্ষকের কাছে থাকা নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকা ও ১৮ হাজার টাকা দামের একটি মুঠোফোন নিয়ে যায়।

আহত শিক্ষক কামরুলকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ঢাকা নেওয়ার পথে ওইদিন (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই এস এম খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালমারী থানায় একটি হত্যা মামলাদায়ের করেন।

২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিপূণ মজুমদার এহাজারভুক্ত ১২জন আসামির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর এপিপি সানোয়ার হোসেন জানায়, আদালত এ হত্যা মামলার ১২জন আসামির মধ্যে পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন।

তিনি বলেন, বাকি সাত আসামির বিরুদ্ধে অনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

এপিপি সানোয়ার হোসেন আরও জানান, হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি আদালত বেআইনী ভাবে বাধা দেওয়ার দায়ে প্রত্যেক আসামিকে এক মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় ওই এক মাসের দণ্ড যাবজ্জীবনের সাথে একই সাথে ভোগ করায় আলাদা ভাবে বাকি এক মাসের দন্ড ভোগ করতে হবে না।

নিহতের বড় ভাই এস এম খায়রুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আদালতের উপর আমাদের পূর্ণ সম্মান আছে। আসামিদের ফাঁসি হলে আমর ভায়ের আত্মা শান্তি পেত, আমরা খুশি হতাম।

(কেএফ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩)