মো: সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের পাহাড়ি অঞ্চলের লালমাটি কলা চাষের জন্য উর্বর হওয়ায় কৃষকরা এককালীন ফলন হলেও অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভের কারণে কলা চাষে ঝুঁকছেন। 

জানা গেছে, জেলার লালমাটি অধ্যুষিত উপজেলা মধুপুর, ঘাটাইল ও সখীপুরের পাহাড়ি মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কলা চাষের প্রতি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক কলা চাষে অর্থনৈতিকভাবে সফলও হয়েছেন। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকা অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় সারা বছরেই কলার চাষ করা যায়।

জেলার মধুপুর, ঘাটাইল ও সখীপুর এ তিন উপজেলার উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৭০-৮০ ভাগই চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, ফুলবাড়িয়া, সিলেট, ভৈরবসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে যাচ্ছে। স্থানীয় কলার পাইকারি বাজার মধুপুরের জলছত্র, গারোবাজার এবং সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজার কলার জন্য বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসব বাজার বা হাটে পাইকাররা কলা কিনতে আসেন।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, মন্দিরা, মন্দিরা সাগর, সবরি, চম্পা, চিনিচাম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বিচিকলা ইত্যাদি জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৩৮০টি কলাগাছ রোপণ করা হয়। একটি কলা গাছে রোপণ থেকে বাজারজাত পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি কলার ছড়ি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ হিসেবে প্রতিবিঘায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা কৃষকরা লাভের মুখ দেখেন।

সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুরে। মহিষমারা, শোলাকুড়ী, বেরীবাইদ, অরণখোলা, কুড়াগাছা, কাকরাইদ, ভবানীটেকী, গরমবাজার, কাউচি বাজারসহ মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামেই দুই হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে।

মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন জানান, পৈতৃক জমি ও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে তিনি বিভিন্ন ফলের চাষ করছেন। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ১৭০০টি কলার চারা রোপণ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন এবং লাভ দুটোই ভালো হবে। এখন শীতকাল থাকায় কলার দাম একটু কম যাচ্ছে। গরম উঠলেই কলার বাজার অনেক বেড়ে যাবে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় চার হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুর উপজেলায়। এছাড়া ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলায়ও কলা আবাদ করা হয়েছে।

(এসএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩)