দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যুবলীগের এক সমাবেশে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ সুলতান খান মঞ্চে উঠতে চাইলে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তরুণ বাধা দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় এক যুবলীগ ও এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছেন অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিরা।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাঙ্গা পৌর সদরের ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই জায়গায় যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কৃষি সম্মেলন ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করা উপলক্ষে জনসভা চলছিল। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

স্বাগত বক্তব্য দেন সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সভা চলাকালে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মঞ্চের কাছে হট্টগোল শোনা যায়। পরে শোনা যায়, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ সুলতান খানকে মারপিট করা হয়েছে।

তবে যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ সুলতান খান বলেন, ‘আমি, জেলা আহ্বায়ক ও আমাদের সমর্থকেরা মঞ্চে উঠতে চাইলে মঞ্চের অন্তত ১০ ফুট দূরে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আমাদের বাধা দেন। তাঁরা বলেন, “আপনারা মঞ্চে উঠতে পারবেন না, নিক্সন সাহেবের মানা আছে।” তাঁদের কথা উপেক্ষা করে মঞ্চে ওঠার জন্য এগিয়ে গেলে ওই যুবকদের মধ্য থেকে দুজন জিয়াউল হাসানকে ধাক্কা দেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম (৩৮) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি দেবাশীষ নয়ন (৩৫) বাধা দিলে হামলাকারীরা কামরুল ও দেবাশীষকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন।’

যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ সুলতান খান দাবি করেন, তিনি ও জিয়াউল মারধরের শিকার হননি। পরে কামরুল ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও দেবাশীষ ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ সুলতান খান মঞ্চে উঠতে বাধাগ্রস্ত হলেও জেলা যুবলীগের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শামীম তালুকদার মঞ্চে ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৫ মে ২১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ওই কমিটিতে জিয়াউলকে আহ্বায়ক এবং মেহেদী হাসান শামীম তালুকদার ও শাহ্ সুলতান খানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। বাকি ১৯ জনকে সদস্য করা হয়। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পান কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. ফারুক হোসেন। তবে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হলেও দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে তাঁর একান্ত আস্থাভাজন কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক সাহাদাত হোসেনকে সমর্থন দেন। ওই নির্বাচনের আগে সাহাদাত দলীয় পদে ইস্তফা দিলেও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের আস্থাভাজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই সময় মঞ্চে ছিলাম। পরে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। আমি শুনেছি, জিয়াউলের সঙ্গে আসা দেবাশীষ একজনের আইফোন কেড়ে নেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়েছে। পরে তাঁরা ওই জায়গা থেকে চলে যান। তেমন বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩)