আসাদ সবুজ, বরগুনা : বরগুনার তালতলীতে মেয়ের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় অপমানে মা আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় মেয়ে ও তার বাবা এ অভিযোগ করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে ব্যাটারির এসিড পানি পান করে মা  জোসনা বেগম আত্মহত্যা করেন।

মেয়ের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়া এলাকার সুলতান হাওলাদারের বখাটে ছেলে আসাদুল হাওলাদার (২৫) একই এলাকার সোবাহান মোল্লার ৮ম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েকে(১৩) বিভিন্ন সময়ে উত্যক্ত করে আসছিল। এক সময় আসাদুল ঐ মেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সাথে প্রেম করতে বাধ্য করেন। এক পর্যায় আসাদুল গোপনে ঐ মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন নাম্বারে ভিডিও কলে কথা বলেন। ভিডিও কলে কথা বলার সময়ে আসাদুল মেয়ের নগ্ন ছবি ধরে রাখেন।

মেয়ে এমন নগ্ন হয়ে আসাদুলের সাথে একাধিক বার ভিডিও কলে কথা বলেন। সেই ভিডিও কলের কথা আসাদুল রেকর্ড করে রাখেন।

গত ৮মার্চ মেয়ের মা জোসনা বেগমকে ভিডিও দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আসাদুল। ওই টাকা এক দিনের ভেতরে না দিলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। একদিন অতিবাহিত হয়ে গেলে টাকা না পেয়ে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার সকালে জানাজানি হলে মা জোসনা বেগম (৩৫) ব্যাটারির এসিড পানি খেয়ে আত্মহত্যর চেস্টা করেন।

পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত্য ঘোষনা করেন। ময়না তদন্ত শেষে দাফন করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃস্টি হয়েছে।

এ ঘটনার পর অভিযুক্ত আসাদুল আত্মগোপনে রয়েছে। তাই তার সাথে কথা বলা যায়নি।

তবে আসাদুলের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমার ছেলে যদি এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। তাহলে আমিও তার বিচার কামনা করছি।

এ বিষয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী বলেন, আসাদুল আমাকে প্রতিনিয়ত উত্যক্ত করতো। একটা সময় আমি তার সাথে কথা বলি। পরে আমাকে ব্লাকমেইল করে নগ্ন ভিডিও কলে কথা বলায় বাধ্য করেন। সেই ভিডিওটি রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে আমার মাকে দেখায় ও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভাইরাল করে দেন। এ লজ্জায় আমার মা আত্মহত্যা করেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। বিচার না পেলে আমিও আত্মহত্যা করবো।

মেয়ের বাবা সোবাহান মোল্লা বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে আসছি। এসে আজ শনিবার বিষয়টি জানতে পেরেছি ও আপনাদের কাছে জানিয়েছি। আমরা এখন মামলা করার জন্য থানায় আসছি। ঐ ভিডিওটি আমার কাছেও আছে। আমি বিচার চাই।

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ঘটনার বিষয়ে তালতলী থানায় একটি মামলা হয়েছে। তবে আসামী এখনো গ্রেফতার হয়নি।

(এএস/এসপি/মার্চ ১২, ২০২৩)