সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জন স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ। ৫২ বছরেও এই বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতি সৌধ নির্মানে গড়িমসি। এতে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। 

প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস এলেই স্মৃতি সৌধের কথা স্মরনে আসে। কয়েক বছর আগেও ভাষা শহীদদের স্মরনে নির্মিত শহীদ মিনারের বেদিতেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। কিন্তু ৩ বছর আগে উপজেলা পরিষদ চত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মিত হয়। আর সেখানেই স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শহীদদের স্মরনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অথচ প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের প্রস্তুতিমূলক সভায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ বা প্রশাসনের নিকট জোর দাবি ওঠে। কিন্তু দাবি আর বাস্তবায়ন হয়না।

উপজেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফলক নির্মানে তেমন নজর দেয়া হচ্ছেনা। স্থানীয় সাংবাদিক ও সুধি জনের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দুয়ার ৩টি বদ্ধ ভূমিতে চিরঞ্জীব নামক স্মৃতিফলক নির্মিত হয় গত বছর। এর মধ্যে কেন্দুয়া উপজেলা সদরের ভূমি অফিস সংলগ্ন রাজরাজেশ্বরী নদীর তীরে, ধুপাগাতি গ্রামের প্রয়াত সিদ্দিকুর রহমান মাষ্টারের বাড়ির সামনে এবং ঘোড়াইল গ্রামের প্রয়াত বিনোদ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে যাদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের স্মরনেই নির্মিত হয়েছে চিরঞ্জীব স্মৃতি ফলক। ২৫ মার্চ গনহত্যা দিবসে স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বালিজুড়া গ্রামের মুখলেছুজ্জামান খান পাঠান ও কচন্দরা গ্রামের মুখলেছুর রহমান খানের দুটি কবর নামে মাত্র পাকা করা হয়েছে। বহুলী গ্রামের পাশে সাইডুলি নদীর তীরে শহীদ মুখলেছুজ্জামান খান পাঠানের কবরখানি যে কোন সময় ধসে গিয়ে নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। মুছে যেতে পারে তাদের স্মৃতি চিহ্ন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সঠিক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।

মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের মোঃ কামরুল হাসান ভূঞা দাবি করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে বাংলাদেশ। এই চেতনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন ও স্মৃতি সৌধ নির্মান এখন সময়ের দাবি। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রাক্তন কমান্ডার মোঃ গোলাম জিলানী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যুদ্ধ করেছি। ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তি আমরা পালন করেছি। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখার জন্য উপজেলা সদরে আজও স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক নির্মান না হওয়া খুবই দুঃখ জনক।

তিনি বলেন, বার বার স্মৃতি সৌধ নির্মানের দাবি উঠলেও স্মৃতিসৌধ নির্মিত হচ্ছে না। সাবেক কমান্ডার মোঃ বজলুর রহমান বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সন্নিবেশিত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মানে প্রায় চার বছর আগে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জায়গা মাপামাপি করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক নির্মানের জোর দাবি জানান।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ নির্মান আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আলোচনার মাধ্যমে জায়গা নির্ধারন করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক নির্মান করব। কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফলক নির্মানে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়াই আছে। কিন্তু কাজটি বাস্তবায়ন করতে কোন পদ্ধতিতে করব সেটি এখনও নির্নয় হয়নি। তবে তিনিও বলেন, স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মান এখন সময়ের দাবি।

(বিএস/এসপি/মার্চ ১২, ২০২৩)