সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : আজকের শিশুরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। সুষ্ঠু ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে শিশুরা। প্রাথমিক শিক্ষাই শিক্ষার মূল ভিত্তি হলেও কেন্দুয়া উপজেলায় ১শ ১১টি শূন্যপদ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মন্থরগতি। এর ফলে আশানুরুপ কোন ফল না পেয়ে ৩২ হাজার ৫শ ৭৫ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। 

কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১শ ৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সরকার নানামুখি সুযোগ সুবিধাও প্রদান করছে। তবে কেন্দুয়ায় ১শ ১১টি শূন্যপদ থাকায় পাথমিক শিক্ষার কার্যক্রমে গতিশীলতা হারাচ্ছে। তাছাড়া অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের অবহেলা, ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা খাতার সাথে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার গড়মিল শিক্ষা কার্যক্রমকে পেছন দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সঠিক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকগন কিন্ডার গার্টেন ও কওমি মাদ্রাসার দিকে ছেলে মেয়েদেরকে ঝুকে পড়ছেন। নিয়মিত বিদ্যালয়গুলিতে তদারকির অভাবে শিক্ষক শিক্ষিকাগণ তাদের মত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কেন্দুয়া উপজেলায় সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তার ৭টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন। ওই তিনজন জোড়াতালি দিয়ে কোন মতে গোটা পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করছেন। ১শ ৮২ জন প্রধান শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও ৪৬টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। তাছাড়া ৫৯ জন সহকারি শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

সবমিলে ১শ ৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকার পদ শূন্য থাকায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। সরকার বছর প্রথম দিকে নতুন পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলেও শিক্ষক শিক্ষিকার অভাবে বছরে পাঠদান কার্যক্রম পরিপূর্ণ ভাবে হয়না। সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা তেমন ভাবে এগুচ্ছেনা। অফিস সহকারি পদে ২ জনের মধ্যে আছেন ১ জন এবং অফিস সহায়কের ১টি পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ছাত্র-অভিভাবকগনের অভিযোগ শিক্ষকরা সময়মত বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেননা। ছেলে মেয়েরা কী লেখাপড়া করল কী করলনা তাও ঠিকমত দেখভাল করেন না। এর ফলে অনেক অভিভাবক মানসম্মত শিক্ষা লাভের আসায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নামে মাত্র ভর্তি থাকলেও তাদেরকে কিন্ডার গার্টেনে নিয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন। ৯৬৮ জন পরীক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেও ১৩৩ জন সাধারন গ্রেডে এবং ৬৪ জন ট্যালেন্টফুলে বৃত্তি লাভ করেছে। এটি খুব আশার কথা নয়।

অপরদিকে অনেক শিক্ষকগণ ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পাঠদানের পাশাপাশি তাদেরকে বিভিন্ন রকম তথ্য কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতে হয়। দ্রুত তথ্য সরবরাহ করার কারণে অনেক সময় তারা নির্ভূল তথ্য পাঠাতে পারেননা। ১২ মার্চ রোববার উপজেলার ১শ ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ১শ ৮২টি ল্যাপটপ বিতরন করা হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকাই প্রশিক্ষিত নয়। যে কারণে তাদের প্রশিক্ষন না দিলে ল্যাপটপ অকার্যকর অবস্থায় পরে থাকবে।

কেন্দুয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সহ প্রধান ও সহকারি শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ না করায় প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজানো যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করতে হলে এখানকার শূন্যপদগুলো পূরনে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

(বিএস/এসপি/মার্চ ১৩, ২০২৩)