ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : নীলফামারী জাদুঘর ও এটিএম মজিবুর রহমানের নামটি যেন জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। তিনি তাঁর সংগ্রহে রেখেছেন ছয় হাজার বছরের প্রাচীন মরমর পাথর,  শত বছরের পুরনো কষ্টিপাথরের মূর্তি, তালপাতায় লেখা রামায়ন, মহাভারত ও হারিয়ে যাওয়া পুঁথিসহ মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শোভা পাচ্ছে নীলফামারী জাদুঘরে। এছাড়াও দেখা মিলবে হাজার বছরের পুরনো শাল কাঠের সাম্পান নৌকা, কেরোসিনচালিত ফ্যান, প্রাচীন জিপ গাড়ি, প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (র.) হস্তলিপি, অখণ্ড ভারতের মানচিত্র, টরেটক্কা মেশিন, এই সব কিছুই এখানে সংরক্ষিত আছে।

প্রাচীন যুগের হারিকেন ও তালা, ৬০ কেজি ওজনের পানির বোতল, তালপাতার পুঁথি, রংপুরের মহারাজা জিএল রায়ের চাদর, রাজকীয় জরীর পোশাক, ১৯৫৭ সালের আওয়ামী লীগের ব্যানার ও ছয় দাঁত বিশিষ্ট জিহ্বা সংযুক্ত শানপাথরের মূর্তি; আরবী, ফার্সি ও বাংলা লেখায় ভূমির দানপত্রসহ আরও অনেক প্রাচীন জিনিসপত্র আছে নীলফামারী জাদুঘরে।

১৯৫৮ সালে জেলা প্রশাসকের পরিত্যক্ত একটি কক্ষে অস্থায়ীভাবে জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়। এটি পরিপূর্ণতা পায় ১৯৮৩ সালে। ২০০০ সালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক এবিএম কামরুল ইসলাম। তবে স্থানস্বল্পতা, জনবল সংকট ও অর্থাভাবে জাদুঘরটির বেহাল দশা।

নীলফামারী জাদুঘরে স্থানস্বল্পতার কারণে অযত্নে পড়ে আছে ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন।

জাদুঘরটির সব নিদর্শন সংগ্রহ করেছেন প্রতিষ্ঠাতা এটিএম মজিবর রহমান। তিনি মনে করতেন, প্রসার ও প্রচারের অভাবে নীলফামারীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জাদুঘরটির কথা অনেকেই জানে না। এটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেলে অনেক দর্শনার্থী হতে পারে।

এটিএম মজিবর রহমান বলতেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল প্রাচীনকালের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো জাদুঘরে ধরে রেখে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। কিন্ত অর্থনৈতিক অভাব ও জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি।’

কেয়ারটেকার রতন কুমার রায় জানালেন, জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি ছাড়াও একজন অফিস সহকারী আর প্রধান দায়িত্বে একজন আছেন। তারা বিনা বেতনে স্বউদ্যোগে ২০০০ সাল থেকে কাজ করে আসছেন। বেতনভাতা নিশ্চিত করে মানবেতর জীবনযাপন থেকে রক্ষার অনুরোধ জানান তারা।

নীলফামারী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সহযোগিতায় জাদুঘরটি জাতীয়করণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এটি স্থানান্তরের জন্য নীলসাগরের (বিন্নাদীঘি) ধারে জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রাচীন এসব জিনিসপত্র সংরক্ষণের তেমন ব্যবস্থা নেই। তাই জাদুঘরটি সংরক্ষণের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।

নীলফামারী শহরের মাস্টার পাড়ায় বুধবার দুপুরে বার্ধক্যে উপনীত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন নীলফামারী জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা এটিএম মজিবুর রহমান। মরহুমের জানাজার নামাজ আজ বৃহস্পতিবার জোহর নামাজের পর ডাক বাঙলো ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজার নামাজের পর ডাক বাঙলো কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।

(ওআরকে/এএস/মার্চ ১৬, ২০২৩)