ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


শুক্রবার ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী  এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০২৩।আজকের শিশু আগামী দিনের কাণ্ডারী। বাংলায় প্রবাদ আছে, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সকল শিশুর অন্তরে। আমারা যদি আগামী দিনে সুস্থ-সবল জাতি পেতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই শিশুদের প্রতি যত্নবান হতে হবে।শিশুর প্রতি অবহেলা মানে সমস্ত জাতিকে অবহেলা করা। সাধারণত আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে শিশুদেরকে কম কদর করতে দেখা যায়। তারা মনে করে, শিশু তো সারা জীবন খাবেই। তাই ভালো-মন্দ শিশুকে না দিয়ে বয়স্কদের খাওয়ানো হয়। এতে করে শুধু শিশুর সুন্দর বিকাশই নষ্ট হয় না। বরং সমস্ত জাতি অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে। তাই শিশু দিবস উদযাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে সঠিক বার্তা পাঠানো যায়।তাছাড়া আমাদের দেশে অনেক সময় শিশুদের উপর অনেক কাজ চাপিয়ে দেয়া হয়। যা রীতিমতো অপরাধের পর্যায় পড়ে। শুধু আইনের প্রয়োগ করেই শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। চাই সামাজিক সচেতনতা। 

শিশু দিবস এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক বাবা-মা না বুঝে সন্তানদের উপর অতিরিক্ত পড়াশোনা চাপিয়ে দেয়, যা তার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। এরপর সে শিশু যখন পেরে না ওঠে, শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। অনেক সময় বাইরে খেলতে যাওয়ার সময় তাকে পড়ার টেবিলে বসতে হয়। ফলে শিশুটির মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। শিশু দিবস উপলেক্ষে সবাই সচেতন হোক, বেড়ে উঠুক আগামীর নেতা সুস্থ-সবল ভাবে।

আর বঙ্গবন্ধুর জীবনের ইতিহাস মানেই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। জীবনে তিনি যা কিছু করেছেন সবকিছু দেশের জন্যই করেছেন। মাত্র ৫৫ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। সময়ের বিচারে এটি সংক্ষিপ্ত হলেও তার জীবনের দৈর্ঘ্যের আকারে তার কর্মের প্রস্থ ছিল অনেক বেশি। তার জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। চলুন তাহলে মহান নেতার সংক্ষিপ্ত জীবনী ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেই।

জন্ম পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহাকুমার (বর্তমানে জেলা) বাইগার নদীর তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়রা বেগম।শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়রা বেগমের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৃতীয়। তার ডাকনাম ছিল খোকা। টুঙ্গিপাড়াতেই খোকার শৈশবকাল কাটে।

শিক্ষাজীবন: ১৯২৭ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন।এরপর ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। ইসলামিয়া কলেজের মুসলিম শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসের নাম ছিল বেকার হোস্টেল। বঙ্গবন্ধু এ ছাত্রাবাসে থেকেই লেখাপড়া করতেন। তি এ ছাত্রাবাসের ২৪ নম্বর কক্ষে ১৯৪৫-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।

পারিবারিক জীবন: মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯৩৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের দুই কন্যা (শেখ রেহানা, শেখ হাসিনা), এবং তিন ছেলে (শেখ কামাল শেখ জামাল ও শেখ রাসেল) । তাদের মেয়ে শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কারাজীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মোট ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মাঝে ব্রিটিশ আমলে স্কুলের ছাত্রাবস্থায় ৭ দিন‌ কারাভোগ করেন। বাকি ৪৬৭৫ তিনি পাকিস্তান সরকারের শাসনামলে কারাভোগ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রথম কারাগারে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের স্মৃতি নিয়ে একটি দুর্লভ আলোকচিত্র সম্বলিত বই রচিত হয় ।বইটির নাম হল “৩০৫৩দিন”।

লেখালেখি: এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হলো- অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২), কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) এবং আমার দেখা নয়াচীন (২০২০)। চলুন তিনটি বই সম্পর্কে সামান্য জেনে নেই।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী

শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হচ্ছে অসমাপ্ত আত্মজীবনী। ২০১২ সালের জুন মাসে এটি প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ফখরুল আলম বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন।

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর লেখা চারটি খাতা হঠাৎ করে তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট হস্তগত হয়। সে খাতাগুলো পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অভ্যন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তিনি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তার আত্মজীবনী লিখতে পেরেছিলেন কিন্তু তিনি এ গ্রন্থ কাউকে উৎসর্গ করে যাননি।

এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন সমর মজুমদার।

কারাগারের রোজনামচা: বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বই হচ্ছে কারাগারের রোজনামচা। এটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ ১৭ মার্চ ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমী বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। এ গ্রন্থের নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহেনা। এর ইংরেজি অনুবাদ করেন ডক্টর ফখরুল আলম ‌

এই বইটিও বঙ্গবন্ধু কারাগারে বসে রচনা করেছিলেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু সময়কালের (১৯৬৬-১৯৬৮) তারা স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী এর মত এটিও নানা বাধা পেরিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

আমার দেখা নয়াচীন: শেখ মুজিবের তৃতীয় বই আমার দেখা নয়াচীন। ২০২০ সালে এটি প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসের চীনের পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে শেখ মুজিব যোগ দেন। সেসময় নয়াচীন দেখার অভিজ্ঞতার আলোকে বইটি রচিত ।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারন: ১৯৯৭ সালে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নং রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়।
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষটি “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ” হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।

২০১১ সালে বেকার হোস্টেলের নবনির্মিত বর্ধিত ভবনকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২০১৭ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লি পার্ক স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রোড করা হয়।
এছাড়া আরো অনেক রয়েছে।

রাজনীতি: ছাত্র জীবনেই তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি ঘটে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি অষ্টম শ্রেণিরছাত্র থাকাকালীন সময়ে প্রথমবারের মতাে জেলে যান। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি তাঁর স্নেহ, আনুকূল্য ও দিকনির্দেশনায় সক্রিয় রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে এগুতে থাকেন। কলকাতায় ছাত্রজীবনে তিনি নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’, ‘নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেলেই পূর্ববঙ্গের মানুষের ওপর পাকিস্তানি শাসকদের শােষণ ও শাসন চলতেথাকে। পূর্ববাংলাকে মুক্ত করাই তখন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রধান লক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনপড়ার সময় থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের শােষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরম্ভ করেন। ফলে ১৯৪৯ সালের ১১ মার্চ পাকিস্তনি সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেন। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হলে তিনি যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে সাধারণ পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হলে নতুন প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়। তিনি ১৯৫৬ সালেপ্রাদেশিক সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু দেশে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারিহলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যু হলে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। এসময় কলকাতার হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙার আন্দোলনেও শেখ মুজিবুর রহমান অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবকে রাষ্ট্র বিরােধী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয় । জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাংলার ইতিহাসে ‘মেঘনা কার্টা’ হয়ে থাকবে।

বঙ্গবন্ধু উপাধি

এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দেশের সুসন্তানগণকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়।যেমন চিত্তরঞ্জনকে দেওয়া হয়েছিল দেশবন্ধু’ এবং ফজলুল হককে দেওয়া হয়েছিল শেরে বাংলা’ খেতাব। বঙ্গবন্ধু শব্দটির অর্থ হলাে বাংলার বন্ধু। বন্ধু তাকেই বলা যায় যে প্রয়ােজনের কথাটি বুঝতে পারে, তা মেটানাের জন্য চেষ্টা করে, বিপদে-আপদে পাশে থাকে। যখন পূর্ব পাকিস্তানের বড় বিপদ সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাইতাে তার নামকরণ বা উপাধি দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু।

১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭১ এর স্বাধীনতা

১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগােষ্ঠী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে শুরু করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি ঘােষণাপত্র ওয়ারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান চৌধুরীর কাছে। পাঠান। এ ঘােষণাপত্রটি হান্নান চৌধুরী কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করেন। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ ।কেন তিনি জাতির জনক : বাংলা ভূ-খণ্ডের একটি সময়ে পরিচয় ছিলাে বিদেশি জাতির একটি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রহিসেবে। ইতিহাসের পাতায় এক নজর চোখ বুলালেই আমরা দেখতে পাই জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিটি পদেব্যর্থতা। শক, তুন, মগ, পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানিরা নানান সময় নানাভাবে আমাদের শােষণকরেছে। ভােগ করেছে আমাদের সম্পদ। শুধুমাত্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমরা বিদেশি পরাশক্তিকে রুখতে পেরেছিলাম।এর পিছনে সবটুকু ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। তিনি নিজের স্বার্থকে সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দিয়ে লড়েছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। জাতি হিসেবে আমাদেরকে প্রথম বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই মহাপ্রাণ বাঙালি। তাই তিনি জাতির জনক।

মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির আদি স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বপ্ন দেখতেন শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ একটি বিশ্ব ব্যবস্থার। আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত তৎপর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাত্র সোয়া দুই বছরের মধ্যে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২১টি দেশের পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জন করে। এর মাঝে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি এবং তার নেতেৃত্বে বেশ কিছু মুসলিম দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উপস্থাপিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের তৎকালীন আমিরদের সাথে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় ব্যস্ত রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর ইসলামপ্রীতি বিষয়ক কিছু ছবি- বঙ্গবন্ধু একজন ইসলাম প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ইসলাম ধর্মসহ সকল ধর্মকে তিনি শ্রদ্ধার নজরে দেখতেন এবং একজন মুসলিম হিসেবে তিনি ইসলাম ধর্মের নানাবিধ আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতেন। কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু তার পুত্র শেখ রাসেলকে নিয়ে ঈদের জামাত শেষে মোনাজত করছেন, নামাজান্তে মুসলিমদের সাথে কোলাকুলি করছেন এবং ধর্মীয় স্থাপনা দর্শনকালে মোনাজাত করছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের সম্প্রসারণ এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেনঃ- নিম্নে তার কিছু ইসলাম প্রিয় অবদান ও ভূমিকার তালিকা প্রদান করা হলো- ১. বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা। ২. বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন (আগে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত কোনো মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ছিল না)। ৩. বেতার ও টিভিতে কুরআন তিলাওয়াত প্রচার। ৪. কাকরাইল মসজিদের জন্য অতিরিক্ত জায়গা বরাদ্দ। ৫. টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান নির্ধারণ। ৬. হজযাত্রীদের জন্য ভ্রমণ কর রহিতকরণ। ৭. বাংলাদেশ সিরাত মজলিস প্রতিষ্ঠা ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন। ৮. ঈদে-মিলাদুন্নবী (স), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা। ৯. সুশীল সমাজ গঠনে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধকরণ এবং শাস্তির বিধান। ১০. রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা। ১১. বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধকরণ। ১২. হজ্জ পালনের জন্য সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা। ১৩. ও আই সি সম্মেলনে যোগদান ও মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন। এছাড়া তৎকালীন প্রায় সব বিজ্ঞ আলেম-উলামার সাথে বঙ্গবন্ধুর সুসম্পর্ক ছিল ভাল।

পদক: ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক এ ভূষিত করে। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধু পদকটি গ্রহণ করেন।

মৃত্যু: শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে।

পরিশেষে বলতে চাই, কোনো বিশেষ ঘটনা বা আনন্দের দিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি আনন্দের দিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একজনই জন্মেছিলেন। যার জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না। এজন্য ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শিশুদের অত্যন্ত আদর করতেন, ভালোবাসতেন। শিশুদের সাথে গল্প করতেন, খেলা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিবে। তরুণ প্রজন্ম এই মহান নেতার আদর্শ থেকেই দেশ গড়ার অনুপ্রেরণা লাভ করে। যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে তাদের মাঝেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন জন্ম থেকে জন্মান্তরে।স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার এই মহান নেতার জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক : কলাম লেখক,গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।