মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : দেশের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে ৮৯ শতাংশ অরক্ষিত। দেশের সব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত ট্রেনের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে ট্রেন ও সাধারণ পরিবহনের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। 

ছোট বেলা থেকেই অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানীসহ প্রতিটি ঘটনা হামিদুরের মনে নাড়া দিতো। তাই ইচ্ছে ছিলো এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার। সেই চিন্তা চেতনা থেকে ‘সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল’ উদ্ভাবন করেছেন তিনি।মোঃ হামিদুর রহমান কালিহাতী উপজেলার হাসড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি ২০০৬ সালে এসএসসি ও ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে সরকারি সা’দত কলেজের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন তিনি। হামিদুর ২০১২ সাল থেকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী টেকনিক্যাল কলেজ ওই তাজিম থেকে ছয় মাসের ইলেকট্রিক্যাল কোর্স ও ২০১৭ সালে এক বছরের কমিউনিক্যাশন টেকনিক্যাল কোর্স সম্পন্ন করেছেন হামিদুর।

সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল সম্পর্কে মো: হামিদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য আমার স্বচিন্তিত, নিজস্ব ও একক উদ্ভাবনটির নাম সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল। যা বিশ্বে নতুন ও অভিনব। ২০১৮ সাল থেকে এই উদ্ভাবনটি নিয়ে কাজ করছি। এই বিষয়ে আমার একটি গবেষণাপত্রও আছে। এই উদ্ভাবন উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত সনদপত্রের পাশাপাশি কপিরাইট সনদপত্র আছে এবং পেটেন্ট সনদপত্রের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। এই উদ্ভাবনটি সোলার পাওয়ারের সাহায্যে সেন্সর অথবা ট্যাগ আইসোলেশনের মাধ্যমে জিএসএম নেটওয়ার্ক দ্বারা অথবা ছাড়া রেলপথের লেভেল ক্রসিংয়ে অটোমেটিক সিগন্যাল বা সংকেত প্রদান করে।

এটা মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে পেরক যন্ত্র, গ্রাহক যন্ত্র ও সম্প্রচার যন্ত্র রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ট্রেন লেভেল ক্রসিং থেকে এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে থাকাবস্থায় প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে গ্রাহক যন্ত্রে সংকেত পাঠায়। এরপর গ্রাহক যন্ত্র তা গ্রহণ করে এবং প্রসেসিং করে সম্প্রচার যন্ত্রে প্রেরণ করে। সম্প্রচার যন্ত্রের অডিও অংশে বলে থাকে, ‘ট্রেন আসছে থামুন’ এবং ভিডিও অংশে লেখা থাকে ‘ট্রেন আসছে থামুন। ’ একই সঙ্গে এই যন্ত্রে গেট ব্যারিয়ার ব্যবহার করা যায়। এই বার্তা শুনে এবং দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে পারাপারকারী যাত্রী ও সাধারণ পরিবহন সতর্ক হয়। এই যন্ত্রের মাধ্যমে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে সাধারণ পরিবহনের দুর্ঘটনা ঘটে না। একই সঙ্গে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রেনের অবস্থান শনাক্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোধ করা যায়।

তিনি আরো বলেন, হামিদুর রহমান বলেন, আমার এই উদ্ভাবনটি রেলমন্ত্রী গত বছরের ২৩ মার্চ অনুমোদন দেন। কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া লেভেল ক্রসিংয়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এই উদ্ভাবনটি রেলপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেশের সব লেভেল ক্রসিংয়ে কাজে লাগানোর জন্য সরকার ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করছি। ৭ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল বসানো সম্ভব।

হামিদুরের দাবি, সারাদেশে এই সেলফ কন্টাক্টর রেলওয়ে অটো সিগন্যাল বাস্তবায়ন করা হলে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কমে যাবে।

(এসএম/এসপি/মার্চ ১৬, ২০২৩)