সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, মানুষের কল্পনা শক্তির বাড়িয়ে রাখার উপায় হচ্ছে বেশি বেশি বই পড়া। বই পড়লে ব্রেইনের ব্যবহার হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বই পড়লে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবে না। ছাত্র-ছাত্রীদের আনন্দময় পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষক মন্ডলীর। কোন শিক্ষার্থীর চিন্তা, চেতনা, মেধা, মনন কেমন তা মা বাবার চেয়ে শিক্ষকরাই বেশি জানেন। তাই একজন শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে হলে শিক্ষকদেরকে আরও যত্মবান, আন্তরিক ও দায়িত্ববান হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম। 

জাফর ইকবাল বলেন, আনন্দময় পড়াশোনার জন্য ইতিমধ্যে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পদ্ধতি চালু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিজ্ঞানে অজ্ঞযাত্রার কথা উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল দৃঢ়তার সংঙ্গে বলেন, ২০৪১ সালে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ। সে সময়ে সেখান থেকে বাংলাদেশে শিক্ষার জন্য ছুটে আসতে হবে।

মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করার কথা বলে জাফর ইকবাল বলেন, অন্যের জন্য কিছু করতে পারলেই নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। তিনি বলেন, জীবনে প্রথম রক্ত দিয়েছি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে। যেদিন প্রথম রক্ত দিয়েছিলাম সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। পরে যখন দেখলাম আমার কিছুই হয়নি এবং জানতে পারলাম আমার রক্ত টাঙ্গাইলে গিয়াছে, পরবর্তীতে টাঙ্গাইলে গিয়ে বুঝতে পারলাম এই রক্ত দিয়ে মানুষের জন্য কিছু করলে ভাল লাগে। তিনি ১৮ বছরের পরে সকল শিক্ষার্থী, যুবক যুবতীদের কিছুদিন পর পর মানুষের জন্য রক্ত দেওয়ার আহ্বান জানান।

কেন্দুয়ার কৃতি সন্তান জাফর ইকবাল বলেন, এতদিন কেন্দুয়ায় সময় কম দিতে পেরে অনেক ভুল করেছি। কেন্দুয়ার মাটির আলাদা একটা গুন আছে। তিনি সব গুণিজনের সম্মান জানিয়ে বলেন, এখন থেকে সময় পেলেই কেন্দুয়ায় ছুটে আসব।

হুমায়ুন আহম্মেদের কথা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, তিনি ছিলেন বহুবিদ প্রতিভার অধিকারী। তার তুলনা তিনি নিজেই। তার সাথে আমার কোন তুলনা করবেন না। আমি হুমায়ুন আহম্মেদের ছোট ভাই। এটিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

কেন্দুয়ায় রিপোর্টার্স ক্লাবের আয়োজনে “তিনদিন ব্যাপী” কেন্দুয়া বই মেলা ২০২৩ সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন। জেলা পরিষদ হল রোমে শনিবার বিকালে রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আসাদুল করিম মামুন ও সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভূঞার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল্লাহ আল মুনসুর, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রাজিব হোসেন, ওসি মোঃ আলী হোসেন পিপিএম, লোক সাহিত্য সংগ্রাহক ছড়াকার জাহাঙ্গীর আলম জাহান। এই মঞ্চে মোঃ নুরুল ইসলাম রচিত রাশেদের প্রেম ও রাজনীতি উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন করেন জাফর ইকবাল।

এর আগে দুপুরে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবে সুধি ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিনি। এ সময় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, পালানাট্যকার রাখাল বিশ্বাস, কবি আয়েস উদ্দিন ভূঞা, কবি ও ছড়াকার জিয়াউর রহমান জীবন, আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান ভূঞা, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আসাদুল করিম মুমুন ও সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভূঞা। ওই সভায় কেন্দুয়া উপজেলা সদরে হুমায়ুন আহম্মেদ লোক সংস্কৃতি একাডেমি স্থাপনে জোর দাবি জানানো হয়। বিকালে পালাগান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট লোক সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল কুদ্দুছ বয়াতী।

(বিএস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২৩)