অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে স্বপ্ন পূরণ হলো ঝিনাইদহের ৬৮ তরুণ-তরুণীর। ঘুষ-তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়েছে তাদের। মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র বাবা-মার স্বপ্ন। খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেকে। আর দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার আহ্বান জানালেন পুলিশ সুপার।

কৃষকের মেয়ে আঁখিতারা খাতুন। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ব্যবধানে আশাহত হয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন পুলিশে চাকরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন।

রবিবার (১৯ মার্চ) রাত ১০টায় ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেললেন এ তরুণী। পাশে এসে দাঁড়ালেন আখের আলী ।

আখের আলী বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজ। বিনা পয়সায় আমার মেয়ের চাকরি হয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরি হয় এটি আজই দেখলাম। আঁখিতারার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার হানিফপুর গ্রামে।

সদ্য পিতৃহারা শাহরিয়ার জোবায়ের। লেখাপড়া ও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিলেন শংকার মধ্যে। বিনা টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে তার। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগ আপ্লুত শাহরিয়ার জোবায়ের। কথা বলতে পারছিলেন না। সদর উপজেলার পোড়া বাকড়ি এলাকার এ তরুণ বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আমি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবো।

রোববার রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন্সে ফল ঘোষণার পর পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীরা এভাবেই নিজেদের অনুভূতির কথা জানান। চূড়ান্ত এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

আঁখিতারা ও শাহরিয়ার জুবায়েরের মতোই মোট ৬৮ জন শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার জানান, ঝিনাইদহ জেলায় পুলিশের ৬৮ জন কনস্টেবল নিয়োগে গত ২,৩ ও ৪ মার্চ ২৩৪৮ জন চাকরি প্রার্থী প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে যাচাই-বাছাইয়ের পর শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করেন ৪১৮ জন চাকরি প্রার্থী। গেল ৯ মার্চ তাদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৬৪ জন। আর ১৯ মার্চ রোববার মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হন ৬৮ জন।

তিনি জানান,আইজিপি মহোদয় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।

(একে/এএস/মার্চ ২০, ২০২৩)