জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : ভূমিসেবা সহজীকরণসহ জায়গা জমির বিষয়ে প্রকৃত মালিককে হয়রানিমুক্ত করতে পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনাই ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। এতে অদূর ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমির মালিককে আর ভূমি অফিসেই যেতে হবে না। ভূমি ব্যবস্থাপনা শতভাগ ডিজিটাইজড হলে এ সংক্রান্ত বহু জটিলতা দূর হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মও শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করেছেন কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।

তিনি আরো বলেন, জমি বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খাস বা পরিত্যক্ত জমি, পুকুর বা হাট-বাজারের ইজারা, ওয়ারিশান জমি হস্তান্তর, জমি বন্ধক—কোনো কিছুতেই আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এককথায় ‘জমি যার রেকর্ড তার’ বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সম্প্রতি, কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে ডিজিটাইজেশন হওয়ায় সেবার গতি বেড়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ হয়েছে। ডিসিআর কাটা হচ্ছে অনলাইনে। নামজারি জমাভাগ আবেদনের ফাইলের তথ্যও অফিস থেকে সব অনলাইনে জানান দেওয়া হচ্ছে।

ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে জমির মালিক ভূমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) পরিশোধ করতে পারবেন। এ জন্য ১০টি মডিউলসমৃদ্ধ ভূমি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (এলআইএমএস) নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। মডিউলগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমি নামজারি ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা, ভূমি নামজারি পর্যালোচনা ব্যবস্থাপনা, ভূমি মিস কেস ব্যবস্থাপনা, বাজেট ব্যবস্থাপনা, খাজনা সনদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ইত্যাদি। এর সব কটির কাজই শেষ পর্যায়ে।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের চ্যালেঞ্জিং দিক হচ্ছে খতিয়ানগুলো ডিজিটাইজ করা। এই প্রকল্পের প্রথম কাজ হলো সব জমির মিউটেশনের খতিয়ান তথা মিউটেড খতিয়ান, সার্ভের খতিয়ান ডিজিটাইজ করা। এই কাজের জন্য এসি (ল্যান্ড) থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জমি যার রেকর্ড তার—এমন সহজীকরণের জন্য ডিজিটাইজ করা হচ্ছে। অনলাইনে দাগ, খতিয়ান চাপলেই মালিকের তথ্য চলে আসবে।

এসিল্যান্ড পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘সব ধরনের সেবা অনলাইনে হওয়ায় ভূমি অফিসের অবৈধ লেনদেনের বদনাম ঘুচবে এবং যেকোনো নাগরিক পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে ভূমিকর দিতে পারবেন। এ ছাড়া জমির ক্রয়-বিক্রয়ের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। তাঁর জমির নামজারি ঠিক আছে কি না, সেটাও দেখতে পারবেন। এখন কর্ণফুলী ভূমি অফিসেও আবেদন কমে গেছে। অল্প সময়ে খতিয়ান পাচ্ছেন। লোকজনও এখন আর আগের মতো অফিসে আসে না।’

তিনি বলেন, ‘যে হারে দ্রুত গতিতে ভূমি অফিসের সব সেবা ডিজিটাল করা হচ্ছে, এতে অদূর ভবিষ্যতে মানুষকে আর সেবা নিতে ভূমি অফিসে যেতে হবে না। আগামী ৫ কিংবা সর্বোচ্চ ৭/৮ বছরের মধ্যে সব কিছু অনলাইনে চলবে। বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু অসম্ভব নয়। অনেক কাজ এগিয়ে গেছে। শুধু কর না, আমরা চাচ্ছি মানুষকে যাতে আর ভূমি অফিসেই যেতে না হয়। এ জন্য সব ধরনের কাজ অনলাইনভিত্তিক করার কাজ চলছে।’

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে নতুন সব নামজারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪ কোটি ৭৬ লাখ পরচার ডাটা সংগ্রহে রয়েছে। যাঁদের তথ্য সংগ্রহে আছে তাঁরা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গেলে যেকোনো জায়গা থেকে তা দেখতে ও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সরকার প্রায় তিন বছর আগে উদ্যোগ নেয়। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে দ্রুততার সঙ্গে সরকারের এ উদ্যোগ এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ, উপায়, একপে ও বিকাশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

(জেজে/এএস/মার্চ ২০, ২০২৩)