ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে উপহার হিসেবে নগদ টাকা লেনদেন বন্ধের দাবিতে ঈশ্বরদীতে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার রাতে শহরের আলহাজ্ব মোড়ে ‘দাওয়াতের নামে হোটেল বাণিজ্য বন্ধের দাবি’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়। প্রাইমারি কালচার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (পিসিডিসি) নামে একটি সামাজিক সংগঠন এ আলোচনার আয়োজন করে।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, দাওয়াতের নামে হোটেল বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। খাবারের প্যান্ডেলের পাশে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে কে কত টাকা ও কি কি উপহার দিলো তার তালিকা করা বন্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠান শেষে কত টাকা লাভ বা তি হয়েছে এখন সে আলোচনাও শোনা যায় । আবার কে কত টাকা দিয়েছে, সামর্থ্য অনুযায়ী কে কম দিলো বা বেশী দিলো পরবর্তীতে তারও গল্প হয়। এতে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা হিনমন্যতায় ভোগে। বিত্তশালী ও মধ্যবিত্তদের দেখাদেখি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র মানুষরা নগদ লাভের আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সুন্নতে খাতনা, নাক-কান ফোঁড়ানো, জন্মদিন বিয়ের আয়োজন করছে।

মুক্ত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা। সঞ্চলনা করেন বিশিষ্ট কলাম লেখক মোশাররফ হোসেন মূসা। ভাষা শহীদ বিদ্যা নিকেতনের সাবেক প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক হানিফুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহব্বায়ক মাসুদ রানা, পাকশী রেলওয়ে কলেজের প্রভাষক সাদ আহমেদ, গৌরিপুর কলেজের প্রভাষক ফরিদ আহমেদ, ফারুক জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন মোল্লা, বাসদ কর্মী ওসমান গনি প্রমূখ আলোচনায় অংশগ্রহন করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন চেয়ারম্যান-মেম্বররা। প্রতিমাসে দাওয়াতের পেছনে একজন চেয়ারম্যানের খরচ হয় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। একজন মেম্বারের খরচ হয় প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা।

সাবেক প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, আগের দিনে শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান হতে দেখা গেছে। তখন শুধু গৃহস্থালি সামগ্রী উপহার দেওয়া হতো। এখন এটা বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সবকিছু যেহেতু বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। তাই কিছু মানুষ সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে বাণিজ্য করছে। এতে পরিবারে অশান্তি, সামাজিক ঐক্য নষ্ট, ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদ রানা বলেন, এখন থেকে আমাদের উচিত হবে দাওয়াত খেয়ে নগদ টাকা না দেওয়া। তবে বই, ফুল, কখনো গাছের চারা উপহার দেওয়া যেতে পারে।

হানিফুর রহমান বলেন, টাকার বিনিময়ে দাওয়াত খাওয়ার এ রীতি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে। উচ্চ বিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দেখাদেখি অনেক গরীব মানুষ লাভের আশায় ঋণ নিয়ে ও গরু-ছাগল বিক্রি করে অনুষ্ঠান করছেন। এতে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। সময় এসেছে এসব অনুষ্ঠানের নামে বাণিজ্য বন্ধ করার।

(এসকেকে/এসপি/মার্চ ২০, ২০২৩)