আবু নাসের হুসাইন, সালথা : ৬০ বছর বয়সি মো. লাল মিয়া। জন্মের পর থেকে তিনি ভূমিহীন। বড় হয়েছেন নিটক এক আত্মীয়র বাড়িতে থেকে। তার বয়স যখন ১৫ বছর তখন পেটের তাগিদে ঢাকায় গিয়ে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে রিকশা চালাতেন। একপর্যায় বিয়ে করে ঢাকার শহরের একটি বস্তিতে বাসা নিয়ে সংসার পাতেন। এরপর ওই বস্তির ভাড়া বাসায় কেটে যায় টানা ৪৫টি বছর। তবে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলেও ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। নিজের উপার্জন টাকায় জমি কিনে বাড়ি করার সক্ষমতা হয়নি তার। শেষ বয়সে এসে বছরখানেক আগে জমিসহ সরকারি একটি পাকা ঘর বরাদ্দ পান তিনি। পরিবার নিয়ে ওই ঘরে এখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১১ নম্বর ঘরের উপকারভোগী বৃদ্ধ মো. লাল মিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি তার এসব তথ্য জানান। লাল মিয়া বলেন, ৪৫টা বছর ঢাকায় কাটিয়েছি। বাড়িঘর না থাকায় এলাকায় আসেনি। ঢাকার শহরে রিকশা চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। মানননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়ার পর মনের ভিতরে আলাদা শান্তি পাচ্ছি। এখন এলাকায় থেকে সবার মুখ দেখছি। ফুকরা বাজারে ছোট একটি সিঙ্গাড়া-পুড়ির দোকান দিয়েছি। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। সব মিলিয়ে ভালই আছি। মাননীয় প্রধানন্ত্রীর জন্য দোয়া করি, তিনি ভাল থাকুক।

ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজা ফুকরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী রোমেছা বেগম বলেন, পাশের নারানদিয়া গ্রামের রিয়াজ ফকিরের সাথে ১১ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। আমার স্বামীর কোনো জায়গা-জমি ও বাড়িঘর ছিল না। বিয়ের পর তিনি আমাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। সেখানে থেকে আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। স্বামী যা উপার্জন করতো তা দিয়ে বাসা ভাড়া ও সংসারই চলতো না। এমন অবস্থায় ৩ বছর ঢাকায় থেকে স্বামীকে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি। সেখানে থেকেই আমার স্বামী দিনমুজুরের কাজ করে সংসার চালাতো। এভাবে বাবার বাড়িতে ৮ বছর ছিলাম। পরে সরকারি একটি ঘর পাই। খেয়ে থাকি আর না খেয়ে থাকি মাথা গোঁজার ঠাই তো পেয়েছি। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে তো পারি। আমাদের ঘর উপহার দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

শুধু লাল মিয়া আর রোমেছা বেগম নয়, তাদের মত অসংখ্য ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিল সালথায়। যাদের নিজের জমি না থাকায় যুগের পর যুগ তারা অন্যের বাসায় ভাড়া থেকেছেন বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন।

গত দুই বছরে খুজে খুজে বের করে সালথায় এমন ৬৩৩ জন ভূমিহীন-গৃহহীনকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাই সরকারি ঘর পেয়ে তারা এখন মহাখুশি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, সালথা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৬৩৩টি পরিবার ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, বারান্দা ও রান্নাঘর রয়েছে। এ ছাড়া উপকারভোগিদের জন্য বিদ্যুত সংযোগ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, চাহিদা অনুয়ায়ী সরকারি সকল ধরণের প্রশিক্ষণ, কম সুদে সরকারি ঋণ সুবিধা, ঘরের আশাপাশের খালি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন ধরণের সাক-সবজির বীজ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন উপকারভোগীকে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাথে সংযোগ সড়ক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আগামী ২২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের সাথে সালথা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনা করা হবে।

(এএনএইচ/এএস/মার্চ ২২, ২০২৩)