রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে গরিব, অসহায় ও দুস্থদের প্রাপ্য দুম্বার গোশত নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ নিয়ে জেলা সদরজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।

উপজেলা পরিষদের কার্যালয় সূত্র জানায়, গরিব, অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশে কোরবানির দুম্বার গোশত পাঠায় সৌদি সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ মার্চ রাতে ৩৭ কার্টন গোশত আসে জামালপুর সদর উপজেলায়। প্রতি কার্টনে গোশত ছিল ২৫ কেজি। ওই রাতেই দুম্বার গোশতের কার্টনগুলো তালিকা অনুযায়ী ভাগাভাগি করা হয়।

দুম্বার গোশতের তালিকায় রহিমা মোজাফফর এতিমখানার পক্ষে জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার হারুনকে ২ কার্টন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও পরিষদের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ২ কার্টন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াছমিন লিটাকে ১ কার্টন ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামানকে ১ কার্টন, দুম্বার গোশত পরিবহনের শ্রমিককে ২ কার্টন ও ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদকে ১ কার্টন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিতরণের তালিকায় বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মচারী, কয়েকটি এতিমখানা ও মাদ্রাসারও নাম রয়েছে।

তালিকায় থাকা রহিমা মোজাফফর নামের কোনো এতিমখানা খুঁজে যাওয়া যায়নি। তবে সদর উপজেলার খুপিবাড়ী এলাকায় ছইম উদ্দিন হাফেজিয়া ও ইসলামী কিন্ডার গার্টেন নামে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রধান ফটকে জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের নাম রয়েছে। সেখানকার এক সহকারী শিক্ষক বলেন, আমরা ১০ টুপলা গোশত পেয়েছি। সেখানে প্রায় ২০ কেজির মতো গোশত ছিল। বাকী গোশতের বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। এদিকে রহিমা মোজাফফর নামের এতিমখানার পক্ষে উপজেলা পরিষদ থেকে মাংস গ্রহণ করেন ওই সংসদ সদস্যের বাড়ির কেয়ারটেকার হারুন।

তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘দুম্বার গোশত পেয়ে ওই মাদ্রাসায় দিয়েছি।'

২০ কেজি গোশত মাদ্রাসা পেয়েছে। অথচ বরাদ্দকৃত ২ কার্টনের মধ্যে প্রায় ৫০ কেজি গোশত ছিল। বাকী ৩০ কেজি মাংস কার বাড়িতে গেলো। এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।

একইভাবে তালিকায় থাকা একটি মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গেও কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা এক কার্টন পাইনি। দুই টুপলায় প্রায় ৫ কেজি গোশত মাদ্রাসায় দেওয়া হয়েছে। এভাবে গোশতগুলো বিত্তশালীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। যাঁদের নামে গোশত বরাদ্দ হয়েছিল তারাও সঠিকভাবে পাননি।

সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘দুম্বার গোশত বিতরণের দিন আমি জামালপুর ছিলাম না। তবে আমার পরিষদের নাইটগার্ড অথবা নৈশপ্রহরীরা ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াছমিন লিটা বলেন, ‘আমাকে একটি কার্টন দেওয়া হয়েছিল। সে কার্টনে কতটুকু মাংস ছিল, সেটাও আমি জানি না। তবে আমাকে দেওয়া সেই কার্টনে পাঁচ প্যাকেট মাংস ছিল। সেগুলো আমার এলাকার মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করেছি। একই সঙ্গে আমার দুই প্রতিবেশী দরিদ্র মানুষকেও দিয়েছি।’

জামালপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘গোশতগুলো দরিদ্র মানুষ, এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিতরণের নির্দেশনা ছিল। সে অনুযায়ী আমরা প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে কার্টন দিয়েছি। তাঁদের নির্দেশনা দিয়েছি মাদ্রাসা বা দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য। পরবর্তীতে তাঁদের কাছ থেকে মাস্টার রুল চাওয়া হবে।'

জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁরা তাঁদের এলাকার মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দেওয়ার জন্য নিয়েছেন।'

তিনি আরও বলেন, গোশত বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে, খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(আরআর/এএস/মার্চ ২৩, ২০২৩)