ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : এক বছর ধরে এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকলেও সারাদিন কান্নাকাটি করে স্বামী সন্তানের ঘরে ফিরে যেতে। কিন্তু বাড়ি থেকে কেউ খোঁজ নিতে আসে না।  এদিকে তার শরীরে পচন ধরেছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা নিয়ে আবারো তার ঠিকানা হয়েছে নীলফামারীর কিশোর গঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে। আনিসার মতো এমন একুশ জন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবীণ মানুষের আশ্রয় হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে।

২২ মার্চ কিশোর গঞ্জ উপজেলা পরিষদে উপজেলাটিকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণার অনুষ্ঠানে এসে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের জন্য একটি হুইল চেয়ার দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের দেওয়া হুইল চেয়ারটি ব্যবহার করছেন কিশোরগঞ্জের বড় ভিটার বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া সাদেকুল ইসলাম। ২১ জন বাক, দৃষ্টি ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী প্রবীণ আশ্রিতদের জন্য পাঁচটি হুইল চেয়ার প্রয়োজন হলেও, প্রতিষ্ঠানটির কাছে আছে শুধু তিনটি হুইল চেয়ার। এরপরও জেলা প্রশাসকের কাছে থেকে হুইল চেয়ারটি উপহার পেয়ে খুশি নিরাপত বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতরা।

১১ মাস থেকে এই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন জহুরা। বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায়। তার ভাই তাকে এখানে রেখে গেছেন, রেখে যাওয়ার পর আর কখনো তার বাড়ি তাকে কেউ দেখতে আসেনি। এই বৃদ্ধাশ্রমই তার ঠিকানা।

মার্চের ২৬ তারিখে ১ বছর এই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা পূর্ণ করবেন আনোয়ারুল ইসলাম দুলাল। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার ছিল সৈয়দপুরে। স্বামী সংসার নিয়ে স্পেন বসবাস করেন তার মেয়ে। কিন্তু এই এক বছরে এক বারের জন্যও তার খোঁজ নেননি।

গত বৃহস্পতিবার ১ বছর দুই মাস এই বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন আরজিনা বেগম। তিন মেয়ে তাদের স্বামীকে সাথে এনে লাশ বাড়ি নিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন রোগ-শোকে ভুগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই বৃদ্ধাশ্রমে। আরজিনার বাড়ি জলঢাকার বালা পাড়ায়। বার বার ছেলে দেখতে চেয়েও দেখতে পারেননি শেষ দেখাটাও।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ২১ জন আশ্রিত সাথে আর একজন যোগ হয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। ঢাকা থেকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে এসেছেন শাহিদা আক্তার। দুই ভাই ও বোন জামাই এখানে রেখে গেছে। তার কেউ নাই দেখার, আর তাই বৃদ্ধাশ্রমেই হলো তার ঠিকানা।

(ওআরকে/এএস/মার্চ ২৩, ২০২৩)