শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে এবছর লিচু বাগান থেকে দেড় হাজার মেট্রিক মধু উৎপাদনে সম্ভাবনা রয়েছে। এ মধু বিক্রি করে জেলায় এবার ১২’শ কোটি টাকা আয়ের মাধ্যমে ২ লাখ বেকারদের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সু্যোগ রয়েছে।

আজ সোমবার সকালে দিনাজপুরে লিচু খ্যাত গ্রাম মাসিমপুরে মধু উৎসবের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে এমনটাই জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।

দিনাজপুরে মধু উৎপাদন সাম্ভাব্যতাকে সম্প্রসারণে মৌ পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ ও মধু উৎসব'২০২৩ এ প্রধান অতিথি'র বক্তনব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশের যে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে লিচু বাগানে এই মধু চাষ অ ও মধু উৎপাদনের মাধ্যমে বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা করছে এই মধু উৎপাদন। এই মধু উৎপাদনের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন আর দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মধু উৎপাদন জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্ব পুর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে।এই মধু এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

দিনাজপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খন্দকার মোহাম্মদ রওনাকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও আলোর পথে জাগো যুব সংগঠনের সভাপতি মোসাদ্দেক হেসেনের সঞ্চালনে বক্তব্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল-আল-মামুন, দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইমদাদ সরকার, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম সোহাগ, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মামুন হাসান চৌধুরী, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. জাকির হোসেন, উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ, বিসিকের মৌ সম্প্রসারন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রুহুল আমীন।

আলোচনা সভা শেষে ৮০ জন মৌ প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরন করেন প্রধান অতিথি হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। পরে তিনি মৌ খামারের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

এদিকে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে গেলবারের চেয়ে বেড়ে গেছে মৌমাছিদের আনাগোনা বেডেছে। স্থানীয় উদ্যোক্তরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৌথামারিরা এসে ভীড় জমিয়েছে। এতে উদ্যোক্তা ও মৌখামারিরা এবার দেড় হাজার মেট্রিক টন মধু আহরণের পাশাপাশি মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ৩০ ভাগ বেশি লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা কথা জানিয়েছন।

লিচু বাগানগুলোতে এখন সারিবদ্ধ মৌবাক্স শোভা পাচ্ছে। মৌমাছির গুণজন আর মৌখামারিদের কর্ম ব্যবস্ততায় এখন মুখরিত লিচুবাগানগুলো। মৌমাছি লিচু মুকুলের মধু নিপূণভারে আহরণের পর বাক্সে ফিরছে। বাক্সে মধু জমা রেখে আবারো মধু আহরণে ছুটছে।

সিরাজগঞ্জ থেকে দিনাজপুরের বিরল মাধববাটি এবং সদরের মাদারগঞ্জ লিচু বাগানে মৌখামার বসিয়েছেন, মৌখামারি চান মিয়া এবং তার দুই ছেলে আরমান সরকার ও ইমাম সরকারসহ তাদের দল। দেশের সবচেয়ে বড় মৌখামারি চান মিয়া জানালেন, তারা এবার দুইটি স্থানে ৮ শতাধিক মৌবাক্স বসিয়েছেন, মধু সংগ্রহের জন্যে। ইতিমধ্যে একশত পঞ্চাশ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করেছেন। আরো আড়াই থেকে তিনশত মেট্রিক টন মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।
শুধু চান মিয়া নয়, কর্মব্যস্ত উদ্যোত্তা ও মৌখামারিরা ইতোমধ্যে প্রচুর মধু উৎপাদন করেছেন।বাকি সময়ে আরো দ্বিগুন মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

দেশের সর্ব বুহত্তর নিচু উৎপাদনের এলাকা বিরল এবং সদর উপজেলাতে এবার প্রায় দেড় শতাধিক মৌখামারি ও উদ্যোক্তা মধু আহরণে নেমেছেন। তারা বেশির ভাগই এসেছেন,দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। দেশের অন্যতম দক্ষ মৌখামারি চান মিয়াও অবস্থান করছেন, বিরলের মাধরবাটি অও সদরের মাদারগঞ্জে’। জেলার ১৩টি উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে এবার প্রায় ৭ শতাধিক মৌখামারি মধু আহরণে কাজ করছেন।

পুষ্টি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও জন্য মধু এবং মৌচাষে অভিঞ্জতা অর্জনে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলোতে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন উদ্যোক্তারাও কাজ করছেন। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেকের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় সাড়ে ৫ হাজার বাগানের ৭ হাজার ৫’শ ৫২ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে।।এবার লিচুর ফলনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ৭’শ ১২ মেট্রিক টন। মাদ্রাজি, বেদেনা-বোম্বাই-চায়না থ্রি, কাঠালিসহ বিভিন্ন জাতের লিচু উৎপাদন হয় এ জেলায়। বেদেনা লিচু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়।এই সু-স্বাদু লিচু’র খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে।বাগানে মধু আহরণে মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে লিচু ফলন আরো ৩০ ভাগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

লিচু বাগানে মধু উৎপাদনে মৌখামারি ও লিচু বাগান মালিকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে,যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগ। এবার জেলায় প্রায় ১২'শ কোটি টাকা মূল্যের দেড় হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(এস/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৩)