শিতাংশু গুহ


প্রতিকূলতা আছে, থাকবে, এরপরও বেশ জোর দিয়েই বলা যায়, ২০২৪-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থাকবে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, শেখ হাসিনা’র কোন বিকল্প নেই। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি অনেকটা একই, আদর্শহীন, সুবিধাবাদী, অসৎ, দুর্নীতিবাজ, ধান্ধাবাজ নেতায় ভরপুর। তফাৎ হচ্ছে, আওয়ামী লীগে ‘কন্ট্রোল’ আছে, এর একচ্ছত্র নেত্রী প্রধানমন্ত্রীই জননেত্রী শেখ হাসিনা, তারমত ঝানু রাজনৈতিক এমুহুর্তে দেশে নেই। বিএনপি নিয়ন্ত্রণহীন।

প্রভূত উন্নয়ন সত্বেও মানুষ যেকোন কারণেই হোক ‘এন্টি-আওয়ামী লীগ’। বিএনপি ফ্যাক্টর নয়, সামনের নির্বাচনটি হবে আওয়ামী লীগ ভার্সেস এন্টি-আওয়ামী লীগ, বিএনপি সুবিধা নিতে চাইবে এটি স্বাভাবিক। অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পক্ষে জেতা কঠিন হবে। বিএনপি এটি জানে, তাই তাঁরা এই একটি দাবি নিয়ে এগুচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারাও জানে, নেত্রী না জেতালে তাঁদের ভরাডুবি ঘটবে। শেখ হাসিনা কি এমন করতে পারেন যে, নির্বাচন মোটামুটি ‘ফেয়ার’ হবে, এবং আওয়ামী লীগ জিতবে?

২০২৪-র নির্বাচন সুষ্ঠূ হতে হবে, ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে না’। ২০২৩-এ দেশে গণবিস্ফোরণ বা জনবিক্ষোভ ঘটার কোন সম্ভবনা নেই? কারণ বিএনপি বা বিরোধী নেতাদের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। শওকত মাহমুদকে বিএনপি বহিস্কার করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ভেতরের অভিযোগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা। পরপর দু’টি অথর্ব সংসদের পর আগামী সংসদ ‘তরতাজা’ হবে, দেশের অধিকাংশ নেতা বিজয়ী হয়ে সংসদে আসবেন, হয়তো আমার বন্ধু শওকত মাহমুদও।

আওয়ামী লীগের একশ’ এমপি বাদ পড়বেন। কারণ, অন্যদের জায়গা করে দিতে হবে। মোটামুটি ২শ’ আসনের লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নামবে, ১৭০-১৮০ পেলেই চলবে, বাকিটা অন্যদের। বিএনপি বা সমমনারা ৭০/৮০ বা এমনকি ৫০? দল হিসাবে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হবে। এমনকি ১৯৯৬’র মত হলেও চলবে, কিন্তু নির্বাচনটি সুষ্ঠূ হতে হবে? আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১’র শাসনামল ছিলো চমৎকার, ২০০৯-২০১৪’ও মন্দ নয়, এরপর শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন, বাকি সবদিকে ধ্বস!

এবার শুধরানোর চেষ্টা হবে! সফলতার একশ’ ভাগ গ্যারান্টি দেয়ার সময় হয়নি, তবে ধর্মান্ধদের সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা কতটা এগুতে পারবেন বলা শক্ত। বঙ্গবন্ধু’র আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনা’র আওয়ামী লীগের মধ্যে তফাৎ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কখনো মৌলবাদের সাথে আপোষ করেননি, তাদের ভোট চাননি বা পাননি। শেখ হাসিনা’র আমলে আওয়ামী লীগ বারবার মৌলবাদের সাথে ‘গাঁটছড়া’ বেঁধেছে, ভোট এখনো পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না? কারণ মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার হয়, রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়না।

আওয়ামী লীগের সমস্যা হচ্ছে, এর যাঁরা সুহৃদ তাঁরা মুখ ফিরিয়ে আছেন। আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা প্রায় সবাই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। মিডিয়া’র অবস্থা একই, সাংবাদিকরা চাকুরী বাঁচাচ্ছেন। কলামিষ্টরা উন্নতির ফিরিস্তি দিচ্ছেন, বা ‘পুরানো কাসুন্দি’ ঘাঁটছেন। দেশে উন্নয়ন ছাড়া আর কিছু নেই, তাই মাঝেমধ্যে মাহিয়া মাহি, হিরো আলম বা আরাফ খান কাহিনী সামনে চলে আসে?

এগুলো বদ্ধ সমাজের লক্ষণ। বাংলাদেশ আবদ্ধ সমাজের দিকে এগুচ্ছে, এ থেকে পরিত্রানের উপায় ‘অবাধ’ নির্বাচন। ‘শত ফুল ফুঁটুক’, দেশে রাজনীতি চাঙ্গা হউক, গণতন্ত্র আসুক। আওয়ামী লীগের পক্ষে পুরো প্রশাসন, পুলিশ, মিলিটারি, সবাই-কারণ ‘খাজা বাবার দরবারে কেউ ফিরে না খালিহাতে’। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। এটাও সত্য, আওয়ামী লীগই পারে, দেশকে এ থেকে বের করে এনে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। ২০২৪’র নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তাই ঘটুক।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।