অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ঝিনাইদহ পৌরসভার বাসিন্দারা। বাসাবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সব জায়গায় মশার উপদ্রব। কয়েল কিংবা স্প্রে সব কিছুই মশার কাছে হার মানছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও মশার হাত থেকে রেহাই মিলছে না।

শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা খাল, পাড়া-মহল্লার ড্রেনসহ গর্তে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পৌরবাসীর।

জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে শহরের প্রাণকেন্দ্রের ২০টি মৌজার ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গ-শ্রেণির ঝিনাইদহ পৌরসভা গঠিত হয়। পরে ১৯৮১ সালে খ-শ্রেণি এবং ১৯৯১ সালে ক-শ্রেণিতে উন্নীত হয় এ পৌরসভা। বর্তমানে মোট ভোটার আছেন ৮২ হাজার।

একসময় নবগঙ্গা খালটি প্রবাহমান ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের দখল ও দূষণে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখানেই শহরের সব ময়লা পানি ড্রেনের মাধ্যমে এসে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন সময় ময়লা-আবর্জনা ফেলে পৌরবাসী। ফলে খালের পানি থেকে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে। আর পৌর কর্তৃপক্ষও নিয়মিত মশা নিধন না করায় বেড়ে গেছে উপদ্রব।

পৌরবাসীর দাবি, নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকার ড্রেন পরিষ্কার ও মশা নিধনে স্প্রে করা হয়েছিল। তবে কিছুদিন পরেই এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মশা বাড়ছেই।

সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকায় অধিকাংশ পাড়া-মহল্লাতে ছোট ছোট ডোবা-নালা আছে। এসব ডোবা-নালার ওপর দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ছে। পৌরসভার বাসিন্দা সাবিব আহম্মেদ বলেন, দিন কী রাত ঘরে-বাইরে মশার উপদ্রব। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মশার হাত থেকে রেহায় পাওয়া যাচ্ছে না। এবছর যেভাবে মশার যন্ত্রণা বেড়েছে এর আগে কখনো এমন দেখা যায়নি। কয়েল, ধোঁয়া কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হামদহ পাড়ার পারভেজ বলেন, শুধু কাগজে-কলমে আমাদের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে।

পৌরসভার মশা নিধন কার্যক্রমের অভাবে মশা চরম আকার ধারণ করেছে। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম করা হলেও বাকিগুলোতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। রোকেয়া খাতুন নামে এক বাসিন্দা বলেন, শুধু রাতে না, দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার করতে হচ্ছে। মশার যন্ত্রণায় নামাজ, ইফতার, সেহেরি কিছুই শান্তিতে করতে পারছি না। নতুন মেয়র ভোটের আগে অনেক কিছুই করবে বলেছিলেন। তিনি এখন মশা মারতেই কাবু, অন্য কাজ করবেন কী করে।

মহিলা কলেজ পাড়ার বাসিন্দা মারুফ আহম্মেদ বলেন, কিছুদিন আগে দেখলাম পৌরসভা কার্যালয় এলাকায় কয়েকদিন ধরে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ভেবেছিলাম পাড়া-মহল্লাতেও আসবে কিন্তু তাদের দেখা আর পাওয়া যায়নি। এবছর যেভাবে মশা বেড়েছে আগের কোনো বছরে এমন মশা দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র মো. কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল বলেন, মশা নিধন অভিযান বন্ধ হয়নি। একবারে সবকিছু করা যায় না। আমরা পর্যায়ক্রমে কাজ করছি। প্রতিষ্ঠানে মশা নিধনের মেশিনও ছিল না। আমি চারটি মেশিনের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকায় মশা বেশি উৎপাত করছে একটু জানান। আমি স্প্রে করার জন্য বলে দেবো।

(একে/এএস/মার্চ ২৯, ২০২৩)