মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ডাক্তার ও নার্সদের যোগসাজেশে রোগী বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক ও নার্সের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা দেয়া হয়।

সরকারি ডাক্তার ও নার্সের রোগী বাণিজ্যের কারণে উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে মাদারীপুর শিবচর-কাঠালবাড়ি সড়ক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় একই পরিবারের সাগর হোসেন (১৮) ও তার বোন সাথী আক্তার (২০) সহ ৩ জন আহত হয়। আহতরা স্থানীদের সহযোগিতায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা জন্য আসে। আহতদের মধ্যে দু’জন প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

সাথী আক্তার নামের রোগীর কপালে সাধারণ আঘাত ও বাম হাত ভেঙ্গে যাওয়া। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তপন কুমার মন্ডল ও নার্স আব্দুর ছালাম মিয়া যোগসাজেশে রোগীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফরিদপুর অথবা ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পরামর্শ দেয়। হাসপাতালে বেঞ্চে শুয়ে রোগীর কাতরাতে কাতরাতে বিনা চিকিৎসায় পেরিয়ে যায় প্রায় দেড় ঘন্টা। স্বজনরা আতংকিত হয়ে রোগীকে ঢাকা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়। আহত রোগীকে জরুরি চিকিৎসা না দিয়ে উল্টো কর্তব্যরত ঐ নার্স আব্দুস ছালাম মিয়া আহত সাথী আক্তারের স্বজনদের ফুসলিয়ে নিজের মালিকানাধীন নুসরাত ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হয়। এরকম অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে উপজেলা। এ ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি থেকে রেহাই চায় শিবচরবাসী।

আহত সাথীর দেবর বলেন, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরেই ডাক্তার ও নার্স বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের ফরিদপুর ও ঢাকা নেয়ার কথা বলেন। পরে নার্স আব্দুস ছালাম মিয়া হাসপাতালের বাইরে গিয়ে বলেন রোগীর কিছু হয়নি। তার চেম্বারে নিয়ে চিকিৎসা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
শিবচর হাসপাতালের সামনে উপস্থিত আবুল হোসেন, রুবেল, রিপনসহ অনেকেই বলেন, শিবচর হাসপাতালের করুন অবস্থা। কোন রোগীকেই ঠিকমত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় না। অধিকাংশ রোগীকে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে কমিশনের লোভে ডাক্তার ও নার্সরা শিবচরের বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়। সারা দিন সরকারি অফিসে বসে যেন বিভিন্ন ক্লিনিকের দালালি করছে।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নার্স আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, ডা. তরুন কুমার হলো মেডিসিনের। সে ভাঙ্গাচোরা সম্পর্কে কি জানে। ডাক্তারের চেয়ে আমি ভালো জানি। নিজের নুসরাত ফার্মেসীতে রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার কথা স্বীকার বলেন, রোগী সাথী আক্তারের কিছুই হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, নার্স ছালাম মিয়া সবসময় নিজের চিন্তা করেন। যত সময় ডিউটি করেন শুধু নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারের কথা ভাবেন।

জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. তপন কুমার মন্ডল বলেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোগীর হাতে গুরুতর ইনজুরি হয়েছে। তাই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর অথবা ঢাকা যাওয়া পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নার্স আব্দুস ছালাম যদি তার ফার্মেসীতে রোগীর চিকিৎসা করে তবে ভুল করেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রাহমান রাজিব বলেন, এব্যাপারে যদি লিখিত কোন অভিযোগ পাই তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএসএ/জেএ/অক্টোবর ২৩, ২০১৪)