স্টাফ রিপোর্টার : শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলের পরও প্রায় এক বছর দেরি করে আদেশ প্রতিপালন করায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রিটকারী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা তাজ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

এতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের যশোরের জেলা কার্যালয় (ডিস্টিকট অ্যান্টি করাপসন যশোরের ডেপুর্টি ডিরেক্টর), যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও), সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বিবাদী করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়। এ লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে বিধান অনযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রিট আবেদন করা হবে বলেও জানান আইনজীবী।

এর আগে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

রুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব ছাড়াও যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও), যশোরের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার, শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের কেন শাস্তি দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালত অবমানান সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির লিটনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ২৩ নভেম্বর আদেশের অনুলিপি নিয়ে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা তাজ।

আদালতে ওইদিন শুনানিতে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা তাজ। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার নঈম আহমেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বাহাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সিরাজুল ইসলাম।

এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা তাজ জানান, ২০২১ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন সৃষ্টপদে একজন নিরাপত্তা কর্মী, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন অফিস সহায়ক (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির পর বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল আলম গত বছরের (২০২১ সালের) ৫ জুলাই স্কুল অফিস কক্ষে এক সভা করেন। ওই সভা আহ্বানের মাধ্যমে পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৭ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

এর পরে ওই বছরের ১৮ জুলাই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে সংক্ষুব্ধ এক প্রার্থী মো. ইকবাল নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ চেয়ে মামলা করেন। ওই মামলার শুনানি নিয়ে সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন আদালত।

যশোরের একটি আদালতের ওই নোটিশের পরও তা আমলে না নিয়ে আবারও ১৯ জুলাই দুটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর পরে বিষয়টি আদালতকে অবগত করা হলে ওই বছরের ৯ আগস্ট আবারও একই আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়াও বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে স্কুলের গাছ বিক্রির অভিযোগ ওঠে। গাছ বিক্রির বিষয় নিয়েও আদালতে আরও একটি মামলা পেন্ডিং রয়েছে।

কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করায় ১৯২৭ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন দাতার নাতি মো. কহিদুল ইসলাম প্রথমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্কুল অ্যান্ড সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) ও সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও অবহিত করে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের ও ব্যবস্থা চেয়ে আবেদন জানান। এর পরও এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি একটি রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের তৎকালীন ও বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারিসহ নিয়োগ নিয়ে নির্দেশনা দেন।

ওই নির্দেশনার পরও সেটি প্রতিপালন না করায় এবার কহিদুল ইসলামের পক্ষে শুনানি নিয়ে আদালত অবমানার রুল জারির এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব, স্কুল অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি), যশোর জেলা প্রশাসক (ডিসি), ডিস্টিকট অ্যান্টি করাপসন যশোরের ডেপুর্টি ডিরেক্টর, যশোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও), যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর উপজেলা স্কুল অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অফিসার, শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বিবাদী করা হয়।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০১, ২০২৩)