নওগাঁ প্রতিনিধি : সঠিক তদারকি ও দেখভালের অভাবে নওগাঁর রাণীনগরের আটটি ইউনিয়নের গরীবের এ্যাম্বুলেন্সগুলো দীর্ঘদিন থেকে অকেজো অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের অসহায় দরিদ্র রোগীদের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা দিতে কেনা এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় উপজেলা গুলোর  লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ্যাম্বুলেন্সগুলো মেরামত কিংবা পুনরায় চালু করার কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় একদিকে যেমন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দ্যেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে অপরদিকে নষ্ট হচ্ছে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা।

জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের অসহায় দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এবং মুর্মূষ রোগীদের মাত্র ৫০টাকার বিনিময়ে দ্রুত সেবা প্রদান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌছে দেয়ার লক্ষে ২০১৫-১৬অর্থ বছরের দ্বিতীয় লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিটি এ্যাম্বুলেন্সে ২লাখ ১০হাজার টাকা ব্যয় করে রিচার্জেবল ইজিবাইক দিয়ে রোগী বহনের উপযোগী করে তৈরী করা হয়। প্রথম দিকে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রসুতি, শিশুসহ জরুরী রোগীদের দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে তৈরী কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্স সেবা খুব দ্রুত মানুষের দ্বোর গোরায় পৌছে যাওয়ায় উপজেলার মানুষের কাছে গরীবের এ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ঠাই করে নেয় এ্যাম্বুলেন্সগুলো। রিচার্জেবল ইজিবাইক দিয়ে রোগী বহনের উপযোগী করে তৈরি করা হয় কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্স যা খুব স্বল্প সময়েই সাড়া ফেলেছিলো। কিন্তু চালুর কিছুদিন পর থেকে প্রয়োজনীয় সার্ভিসিং ও রক্ষানাবেক্ষণের অভাবে আস্তে আস্তে অচল হয়ে পড়ে। আর এখন কোন কোন ইউনিয়নে ছাঁদের নিচে আবার কোন কোন ইউনিয়নে খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর অকেজো অবস্থায় রোদ আর বৃষ্টিতে পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশসহ গাড়ির সবকিছুই।

সরেজমিনে মিরাট ও কাশিমপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ধুলোবালির মাঝে এ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। গাড়িটির চাকা, বডি, ব্যাটারীসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে বসেছে।

অপরদিকে কাশিমপুর ইউপির অভ্যন্তরে থাকা এ্যাম্বুলেন্সটির ব্যাটারী চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে গাড়িটি। ব্যাটারী কিনতে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার প্রয়োজন আর সেই টাকার কোন উৎস কিংবা সরকারি ভাবে বরাদ্দ না থাকায় অচল অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে গরীবের এই এ্যাম্বুলেন্সটি। এভাবেই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের এই কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলো বছরের পর বছর পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হতে চলেছে। আবার অনেক ইউনিয়নের এ্যাম্বুলেন্স বছরের পর বছর গ্যারেজে ফেলে রাখা হয়েছে।

কাশিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসানুর রহমান, মিরাট ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি মাল দড়িয়া মে ঢাল’, বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও পুরোনো গাড়িগুলো মেরামত করে সেগুলো সাধারণ মানুষদের সেবায় নিয়োজিত করা হয় না। এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো মেরামত করে নির্দিষ্ট একজন চালক নিয়োগ দিলে বিশেষ করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া গরীব, অসহায় ও নিম্ম আয়ের মানুষের স্বাস্থ সেবার জন্য খুবই উপকার হতো।

কাশিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বাবু বলেন এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো খুবই উপকারী ও প্রয়োজনীয়। খুব সহজেই যে কেউ এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যবহার করে জরুরী রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রকল্পের হওয়ার কারণে পরবর্তি সময়ে তা মেরামত করার জন্য কোন অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা না রাখায় আজ সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আবার নির্দিষ্ট চালক না থাকার কারণে অনেক সময় এ্যাম্বুলেন্স তার সেবা দিতে পারতো না।

তিনি আরো বলেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতো তাহলে তার সঙ্গে আামরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু অর্থ যোগ করে এ্যাম্বুলেন্সগুলো মেরামত করে সেগুলোকে আবার পুরোদমে সচল করতে পারতাম। তাহলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সরকার এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো বরাদ্দ দিয়েছিল তা শতভাগ সফল হতো।

এ ব্যাপারে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, ইতোমধ্যে ই-পত্র প্রেরণ করে এই এ্যাম্বুলেন্সগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি। প্রাপ্ত নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তিতে গাড়িগুলোর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সেগুলো পুনরায় মেরামত করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

(বিএস/এসপি/এপ্রিল ০১, ২০২৩)