শেখ ইমন, শৈলকুপা : শুরুটা নদী ভাঙ্গন দিয়ে। ভাঙ্গনে চলে গেছে বসতভিটা, পরে ঠাঁই হয়েছিল নদীর-ই চরে, তাও পুড়ে গেল আগুনে, এখন কারও বসবাস কলা বাগানে,আবার কারও খোলা আকাশের নীচে। দিনমজুর ৭টি পরিবারের এমন গল্প ঝিনাইদহের শৈলকুপার হাকিমপুর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর মাদলাপূর্ব পাড়ের গ্রামে।

চরমাদলা গ্রামের আমোদ আলী মন্ডল, স্ত্রী সহ ২ ছেলে আর ১মেয়ে নিয়ে পরের খেতে দিনমুজুরের কাজ করে চলে তার সংসার। আমোদ আলীর বড় ছেলে ঘোড়ার গাড়ি চালায় আর ছোট ছেলে সবে মাত্র এইচএসসি পাশ করেছে, মেয়েটা গার্মেন্টেসে চাকুরী করে। আমোদ আলী জানান, আজ থেকে ২৫ বছর আগে খরস্রোতা গড়াই নদীর ভাঙ্গনে চরমাদলা পশ্চিম অংশের বাড়ি-ঘর সহ সব হারিয়ে ঠাই নিয়েছিলেন নদীর ওপারের চর মাদলা পূর্ব পাড়ে। কিন্তু সেই বাঁশখুঁটির ঘরও এখন নেই ! ২৯ মার্চ মঙ্গলবার বিকালে আমোদ আলী সহ মোট ৭টি পরিবারের ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্রসহ সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত ৭দিনেও জোটেনি কোন সরকারী সাহায্য সহায়তা ।

জানা যায়,২৫ বছর আগে বসত ভিটা(পশ্চিম মাদলা) গড়াই নদীর ভাঙ্গনে চলে গেলে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে ২৫টি পরিবার চর মাদলা পূর্বপাড়ে খাস জমিতে আশ্রয় নেয় । এরপর অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে পরিবারগুলো বসতি স্থাপন করে। সেদিন আমোদ আলী মন্ডলের চুলার আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে স্থানীয়রা জানায় । এরপর মুহুর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে গিয়ে ৭টি পরিবারের শোয়ার ঘর রান্না ঘর গোয়াল ঘর সহ ২০টি ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর রাজবাড়ির পাংশা উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও কোন কিছু রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ৭টি পরিবারের প্রায় ২০টি ঘর আগুনে পুড়ে গেছে কোন রকম কলা গাছের ভিতর পাটকাঠি দিয়ে ছাপড়া বানিয়ে অতি কষ্টে বসবাস করছে পরিবারগুলো। এমনভাবে সব পুড়ে গেছে যে ভাত খাওয়ার থালা পর্যন্ত নেই। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন কাটছে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারী কোন সাহায্য মেলেনি। আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে ওই গ্রামের আঃ সামাদের ছেলে আমোদ আলী, গোলাম মোস্তফার ছেলে আনিচ শেখ, সৈয়দ আলী শেখের ছেলে সোনা আলী শেখ, হবিবার ফকিরের ছেলে দুর্লভ ফকির,মৃত গফুর বিশ্বাসের ছেলে আমিন বিশ্বাস ও লাল চাদ। বর্তমান পরিবারগুলো মানবতার জীবন কাটাচ্ছে। পরিবারগুলো সাহায্যের জন্য পথের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা সবাই পরের ক্ষেতে দিন মজুরের কাজ করে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য আমোদ আলী মন্ডল জানান, গত মঙ্গলবার তার বাড়িসহ ৭ পরিবারের সব বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যায়। এসম তার ছোট ছেলে আগুনে দগ্ধ হয়। তবে এতোদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সরকারী সাহায়তা পায়নি। নদীর চরে কলাগাছের ভিতরে পাটকাঠির বেড়া দিয়ে কোন রকম রাত্রি যাপন করছেন তারা। আমোদ আলীর মেয়ে গার্মেন্টসে চাকুরী করে যেসব আসবাবপত্র বানিয়েছিল তাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আরেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য সোনা আলী শেখ জানান, ২৫ বছর আগে গড়াই নদীর ভাঙ্গনে বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এই চরে। তিলে তিলে গড়া সবকিছু আগুন কেড়ে নিয়েছে।

হাকিমপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ জানান, পবিবারগুলো অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এখনো কোন সরকারী সাহায্য পায়নি। শুনেছি ইউএনও বরাবর তারা লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী জানান,আমি বিষয়টা শুনেছি। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের মধ্যে যোগাযোগ করছি। ১-২ দিনের মধ্যে সরাসরি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

(এসআই/এসপি/এপ্রিল ০৩, ২০২৩)

শেখ ইমন, শৈলকুপা : শুরুটা নদী ভাঙ্গন দিয়ে। ভাঙ্গনে চলে গেছে বসতভিটা, পরে ঠাঁই হয়েছিল নদীর-ই চরে, তাও পুড়ে গেল আগুনে, এখন কারও বসবাস কলা বাগানে,আবার কারও খোলা আকাশের নীচে। দিনমজুর ৭টি পরিবারের এমন গল্প ঝিনাইদহের শৈলকুপার হাকিমপুর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর মাদলাপূর্ব পাড়ের গ্রামে ।