গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর কে.জি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষককে টেলিফোনে একজন আওয়ামীলীগ নেতা অকথ্য ভাষায় 'গালিগালাজ করে হুমকী' দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লাঞ্ছিত ওই শিক্ষককে পরে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন নাইট গার্ড মারধর করেছে বলেও ওই শিক্ষক অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজটি আজ দিনভর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে ওই শিক্ষকের পক্ষে ও বিপক্ষে এখন ফেসবুকে বিভিন্নভাবে লেখালেখি চলছে। তবে উভয় পক্ষই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাউর ফতেহপুর কে.জি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. ইব্রাহিম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া দৈনিক বাংলা ৭১ এর কাছে তাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয়েছে অভিযোগ করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান,'আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা আনুমানিক সাড়ে এগারটার দিকে স্কুলের হেড স্যারের কক্ষে যাই। এসময় হেড স্যার আমাকে তাঁর মোবাইল ফোনটি আমাকে দিয়ে বলেন, স্কুলের সাবেক সভাপতি ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ স্যার তোমার সঙ্গে জরুরী কথা বলবেন। আমি তখন মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়ে সালাম দিয়ে কথা বলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যারিষ্টার জাকির স্যার আমাকে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি তখন স্যারকে ফোনে বারবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি, আপনি আমার সম্পর্কে যা শুনেছেন, সেসব সত্য নয়। কিন্তু তিনি (ব্যারিষ্টার) এরপরও গালিগালাজ অব্যাহত রেখে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকী দেন।'

শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া আরও জানান,'এরপর আমি স্কুল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে গেলে, ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ কলেজের নাইটগার্ড শাহীন মিয়া আমার বাসায় গিয়ে আমার ওপর হামলা করেন। এসময় আমি প্রাণে বাঁচতে পাশের একটি হিন্দু বাড়িতে আশ্রয় নিলে, সেখানে গিয়েও শাহীন আমাকে সবার সামনে মারধর করে। আমি এর বিচার চাই।'

আপনাকে শুধু শুধু কেন গালাগালি করতে গেলেন ব্যারিষ্টার জাকির? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক ইব্রাহিম বলেন,'আমি নাকি এলাকার মানুষের কাছে বলেছি, ব্যারিষ্টার জাকির স্যার স্কুলে সভাপতি থাকাকালীন স্কুলের টাকা মেরে এলাকায় কলেজ করেছেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এর সত্যতা যাচাই না করেই আমাকে ফোনে গালাগালি করেন এবং নাইটগার্ড দিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করেন।'

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাইটগার্ড শাহীন মিয়ার বক্তব্য জানার জন্য বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পরে এ বিষয়ে ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,'এসবই স্থানীয় একটি চক্রের পরিকল্পিত সাজানো নাটক। যারা মূলত আমার রাজনৈতিক উথ্যান দেখে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যে ও কাল্পনিক অভিযোগ।'

ব্যারিষ্টার জাকির বলেন,'আমি যদি ইব্রাহিম মাস্টারকে ফোনে গালাগালি করে থাকি, নিশ্চয় মোবাইলে তার রেকর্ড থাকবে। তাই আমাদের কথোপকথনের রেকর্ডটি চেক করে দেখা হোক। বরং আমার বিরুদ্ধে এরকম মিথ্যে অভিযোগ এনে ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে একটি চক্র আমার ইমেজকে ক্ষুন্ন করতে যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে। আমি এর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে ম্যানেজিং কমিটির কাছেও আমি এর কঠোর বিচার চেয়েছি।'

আপনার নির্দেশে আপনার কলেজের নাইটগার্ড শাহীন মিয়া ওই শিক্ষককে বাড়িতে গিয়ে মারধর করেছে বলে শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়া যে অভিযোগ করেছেন! এ বিষয়ে ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদ বলেন,'এটিও ওই চিহ্নিত চক্রটিরই মিথ্যে, ভিত্তহীন প্রচারণা। বরং আমার কলেজের নাইটগার্ড শাহীনকেই ওই শিক্ষক নাকি উল্টো মারধর করেছেন বলে আমি লোকমুখে শুনেছি।'

এ বিষয়ে কথা বলতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবিরকে একাথিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদ্য বিদায়ী সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন,'ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক ও উদ্বেগজনক। যার নিন্দা জানানোর ভাষাও নেই। তাই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি করছি।'

এ বিষয়ে লাউর ফতেপুর কেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি, ব্যারিষ্টার জাকির আহাম্মদের বড় ভাই, সাবেক ছাত্রনেতা ডা. মিজানুর রহমান দৈনিক বাংলা ৭১ কে বলেন,'গত ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে পরাজিত চক্রটি পরিকল্পিতভাবে আমাদের পরিবারের ইমেজকে ক্ষুন্ন করতেই এসব সাজানো নাটক তৈরী করছে। তানাহলে ধরে নেই, ঘটনাটি যদি সত্যও হয়, তাহলে কি এর বিচারের জন্য আমরাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কিংবা প্রশাসন ছিলো না? এরজন্য কয়েক মিনিটের মধ্যে 'হাছা মিছা' বানিয়ে মোবাইলে ওই শিক্ষকের কথা রেকর্ড করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিতে হবে? সুতরাং এতেই প্রমান হয়, আমাদের পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে মূলত এসবই কাল্পনিক ও সাজানো নাটক।'.

তবে ডা. মিজানুর রহমান জানান,'শিক্ষক ইব্রাহিম মিয়ার বিরুদ্ধে অতীতেও এলাকায় অনেক অনৈতিক ঘটনা ঘটানোর নজির রয়েছে। তাই এবার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীর বিরুদ্ধে আমরা কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'

(কেডিএ/এএস/এপ্রিল ১৪, ২০২৩)