পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা মুক্তাঞ্চলে এলাকায় গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন বন্ধুদের সাথে বাইক চালাতে গিয়ে দুুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয় নুরুজ্জামান নিশান (১৪)। দুর্ঘটনার পরপরই তাকে ভর্তি করা হয় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসা জন্য পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নিশান এই হাসপাতালেই টানা ৮ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল শনিবার দুপুরে মারা যায়। ওইদিনই
তার লাশ আনা হয় গ্রামের বাড়ি জগদলে। রাত সাড়ে দশটায় তার নামাজে জানাজা জগদল হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিহত নুরুজ্জামান নিশান ওই এলাকার মৃত আলম হোসেন ছেলে। সে পঞ্চগড় বিষ্ণুপ্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি'র প্রভাতি শাখার ছাত্র। ওর বড় বোন আশা আকতার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। চা বিক্রেতা বাবা মারা যাবার পর, নিশান আর আশাকে মা নুরিনা আক্তার আদর শ্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছে। অতিকষ্টে ওদের বরণ পোষণ ও লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছিল। পিতৃহারা সন্তানের অকাল মৃত্যুতে মা নুরিনা আকতার বাকরুদ্ধ। বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী আশা আকতার দিশেহারা। রাতে ঘটনাটি জানতে পারেন নিহত নিশানের পরীক্ষার্থী বোন আশার স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তাৎক্ষণিক তিনি তার স্কুলের অন্য দুই শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন ও মো. আফজাল হোসেনকে নিয়ে পৌঁছে যান আশাদের বাড়ি। ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় যাতে আশা পরীক্ষা থেকে বিরত না থাকে এ সাহস যোগান তাঁরা। দুঃসময়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর বাড়ি যাওয়ায় ভাই হারা বোন মনোবল ফিরে পাই। রাতে ভাইকে কবরাস্থ করে সকালে পরীক্ষার বসে বোন।

জানা গেছে, ঈদের দিন দুপুরে নিশান তার দুই বন্ধুসহ মোটরসাইকেল যোগে জগদল থেকে দশমাইল এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই সেতু এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাদের। এতে সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয় নিশান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

(আর/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২৩)