বিশেষ প্রতিনিধি : মধুখালি থানার কামালদিয়া ইউনিয়নের কয়েসদিয়া গ্রামে গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টার সময় পাওনা টাকা চাইতে গেলে মোসা: নিসা বেগম (৫০), নাজনিন আক্তার নবীন (৩০, আম্বিয়া বেগম ( ৪০) নামে তিন নারীকে মেরে আহত করে। পরবর্তীতে আহতরা তাৎক্ষণিক মধুখালী থানায় জানিয়ে ওইদিন বিকাল ৪ টার দিকে মধুখালী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তারা। কিছুক্ষণ পরে জৈনক প্রবীর নামে মধুখালী থানার এক এসআই যারা মাইর দিয়েছেন রহস্যজনক কারনে তাদেরই পক্ষে অবস্থান নেন। এবং আহতদের মারধরের সাথে জড়িতদের রাত ৮ টার দিকে নিজ তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি করিয়প দেন ওই এসআই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। ওই দিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী নাজনীন আক্তার নবীন (৩০) থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এবং পরবর্তীতে গভীর রাতে এসআই প্রবীর বাবুর নির্দেশে যারা মার দিয়েও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তারাও একটি কাউন্টার অভিযোগ দায়ের করেন। এবং কোন মামলা তখনও না হলেও যারা জখম হয়েছেন তাদেরই উল্টো জৈনক প্রবীর দারোগা গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছিলেন এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারকে উন্টো বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দোখিয়ে আসছিলেন বলেও জানান তারা।

মধুখালী থানার দারোগা প্রবীরের এমন অপেশাদারিত্ব আচরণের কারণ জানতে চাইলে মধুখালি থানার ওসি শহিদুল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, "কোন প্রমাণ আছে? প্রমাণ না থাকলে এসব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা।"

গত শুক্রবার মধুখালী থানার ওসি শহিদুল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে আরো বলেেছেন, 'একই এলাকার প্রতিবেশীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে, আমি দুই পক্ষকে ঢেকেছি দেখি মীমাংসা করে দেয়া যায় কিনা? মীমাংসায় না আসলে আমি উপয়ের দেয়া অভিযোগ আমলে নিয়ে সব আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠাবো।' পরবর্তীতে মীমাংসা আর সম্ভব হয়নি।

গতকাল শনিবার ওই গ্রামের ভুক্তভোগী পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য ও জৈনক মঞ্জুর মাতুব্বরের ৮ বছরের শিশু লিওন'কে অভিযুক্ত পরিবারের সন্ত্রাসী সদস্য মোঃ সিয়াম মোল্যা (২০) পিতা: মোক্তার মোল্যা, মোক্তার মোল্যা (৪৮) ও মিন্টু মোল্লা (৪৫) উভয় পিতা: ছবেদ মোল্যা কিল ঘুষি, চড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং শিশু লিওনের গলায় পাড়া দিয়ে বেহুস করে ফেলে। পরিবার দ্বারা শিশুটিকে সাথে সাথে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পৈশাচিক নির্যাতনে গুরুতর আহত শিশু লিওনের চাচা টোকন মাতুব্বর কারণ জানতে প্রতিবেশী ওই লোকের বাড়ীতে গেলে তারা কেউ বাসা থেকে বের না হওয়ার তিনি (টোকন) বাড়ীতে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পরে ওই দুর্বৃত্তরা কয়েসদিয়ার মোস্তফা ফকির (৩০) পিতা: নিসার ফকির ও সবুর মোল্যা (২৫) পিতা: দুলাল মোল্যা, শান্ত (২০) পিতা- বক্কার, সহিদুল সর্দার (২৭) পিতা সেকেন সাপুড়ে সাং কামালদিয়ার নেতৃত্বে ২০/২৫ লোক মিলে আহত শিশুটির চাচা টোকনসহ তিনজনকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এতে টোকনের দাঁত ভেঙ্গে যায়।

আহত টোকন ৯৯৯ এ ফোন দিলে মধুখালী থানা থেকে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে টোকন মাতুব্বর থানায় গিয়ে মারধরের এমন ঘটনায় মামলা করতে চায়। কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে পরবর্তী মামলা না নিয়ে তাকেই উল্টো গ্রেফতার দেখিয়ে থানা হাজতে রেখে দেয় মধুখালী থানা পুলিশ।

গতকাল শনিবার রাতে এই বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে মধুখালী থানার ওসি জানান, "আমি দু'পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, মীমাংসার করার চেষ্টাও করতেছিলাম। যেহেতু কোন পক্ষ মীমাংসায় আসেননি, তাই আমি সকালে তাদের পুর্বে করা অভিযোগ দু'টো আমলে নিয়ে উভয় দলের আসামীদের গ্রেফতার করে চালান দিবো। একজনকে গ্রেফতার করেছি, বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ অন্য কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি বলে জানিয়েছেন মধুখালী থানার ওসি শহিদুল। এদিকে আজ রবিবার সকালে মামলা এন্ট্রি করে আগের দিন মামলা করতে আসা আহত টোকনকে সকালে ফরিদপুর কোর্টে চালান করে দিয়েছে মধুখালী থানা পুলিশ। যদিও ফরিদপুর কোর্ট আহত টোকন মাতুব্বরকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। এই দিকে মধুখালী থানা কমপ্লেক্স চিকিৎসা নেয়া শিশু লিওন শংকামুক্ত বলে জানিয়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জামিনে মুক্তি পেয়ে আহত টোকন মাতুব্বর উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, আমি কাল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করেছিল তাই মামলা করতে পারিনি। এখন মুক্ত। আমি চিকিৎসা নিয়ে আমাদের ও আমার অবুঝ ৮ বছরের ভাতিজা লিওনকে হত্যা চেষ্টার বিচার চেয়ে মামলা করবো। সন্ত্রাসীরা ও তাদের পক্ষে মধুখালী থানার প্রবীর দারোগা আমাদের বাড়ীতে ও উক্ত ঘটনাগুলোর সাক্ষীদের অনবরত হুমকি ধামকি দিয়েই যাচ্ছেন। আশা করি রাষ্ট্র অবশ্যই আমাদের নিরাপত্তা দিবেন বলেও জানান ভুক্তভোগী টোকন মাতুব্বর।

(আর/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২৩)