নিউজ ডেস্ক : দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় ও ‘কালবেলা’ উপন্যাসের অমর স্রষ্টা ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। সোমবার (৮ মে) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বরেণ্য এ ঔপন্যাসিকের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সমরেশ মজুমদার একাধারে নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, গোয়েন্দাকাহিনি ও কিশোর উপন্যাস লেখক ছিলেন। মানবজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার রসায়ন প্রকাশ পায় তার লেখায়। বিশেষত তার উপন্যাসগুলোর বিষয়বস্তু, রচনার গতি ও গল্প বলার স্টাইল পাঠকের কাছে তাকে স্বকীয় উচ্চতায় আসীন করেছে। তার লেখায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে উত্তরবঙ্গের নানা অনুষঙ্গ।

১৯৪২ সালের ১০ মার্চ সমরেশ মজুমদারের জন্ম। শৈশব কাটে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। স্কুলজীবন শুরু জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ১৮ বছর বয়সে ১৯৬০ সালে কলকাতায় আসেন। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি সমরেশ মজুমদারের প্রচণ্ড আসক্তি ছিল। যে কারণে তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিল মঞ্চনাটকের জন্য। সেই থেকে লেখকজীবনের যাত্রা শুরু। ১৯৬৭ সালে তার লেখা ‘অন্যমাত্রা’ গল্পটি দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৫ সালে দেশ পত্রিকাতেই ছাপা হয় সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন জীবন্ত হয়ে ওঠে তার লেখনিতে।

সমরেশের লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘সাতকাহন’, ‘তেরো পার্বণ’, ‘স্বপ্নের বাজার’, ‘উজান’, ‘গঙ্গা’, ‘ভিক্টোরিয়ার বাগান’, ‘আট কুঠুরি নয় দরজা’, ‘অনুরাগ’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি উপন্যাস ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান নিয়েছে।

দীর্ঘ লেখক জীবনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কারে ভূষিত হন সমরেশ মজুমদার। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার পান তিনি। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে পান বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। তিনি বাংলাদেশ ও কলকাতা তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষিদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন একজন শুদ্ধাচারী লেখক হিসেবে।

(ওএস/এএস/মে ০৮, ২০২৩)