মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, কোন সাংবাদিক অন্যায় করলে প্রেস কাউন্সিলের বিদ্যমান আইনে তার শাস্তি হলো তিরষ্কার করা। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এটি একসময় সবচেয়ে বড় ও লজ্জাজনক শাস্তি হলেও বর্তমানে এটি অকার্যকর। এর বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়নি প্রেস কাউন্সিলকে। তবে প্রেস কাউন্সিলকে আগামীতে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজের মুন কনফারেন্স হলে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশ গ্রহণে প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত ’’প্রেস কাউন্সিল আইন-১৯৭৪ ও আচরণবিধি এবং তথ্য আধিকার আইন অবহিতকরণ’’ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এসব কথা বলেন।

সেমিনারটি সফলভাবে শেষ হয় দুপুর ১টায়। এর আগে বিভাগীয় শহর সিলেট ও সুনামগঞ্জেও একই বিষয়ে সেমিনার ও মতবিনিময় সভা আয়োজনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম।

সেমিনারে তিনি বলেন, আইন অনুয়ায়ী প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা অনেক কম। একজন সাংবাদিক অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে প্রেস কাউন্সিলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই অনেকেই অভিযোগ করতে নিরুৎসাহিত হন। বর্তমানে প্রেস কাউন্সিলের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ হচ্ছে। প্রেসকাউন্সিল আইনের ব্যাপ্তি বাড়াতে একটি প্রস্তাবনা সরকারের কাছে রয়েছে। আগে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে কম মামলা আসলেও এখন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর ২৩টি মামলা এসেছে প্রেস কাউন্সিলে।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের প্রেস কাউন্সিল থেকে প্রকাশিত প্রেস কাউন্সিল আইন ১৯৭৪, সাংবাদিকতা নীতিমালা, হলুদ সাংবাদিকতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, তথ্য অধিকার আইন-২০০৯, সাংবাদিকদের জন্য অনুসরণীয় আচরণবিধি-১৯৯৩ ও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার সঙ্গে দ্বায়িত্বশীলতা ওতপ্রোত জড়িত শীর্ষক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বলিত একটি ধারণা পত্র, প্যাড ও কলম দেয়া হয়।

প্রেস কাউন্সিলের সুপারিন্টেন্ড শাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হওয়া সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, প্রেস কাউন্সিল সচিব মাসুদ খান। সেমিনারে অন্যান্যদের বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রভাংশু সোম মহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস্) সুদর্শন কুমার রায় ও জেলা তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে পাবলিক লেভেলে তিনটি মত আছে, একটি হলো যে এ আইনটা পুরোপুরি এই ভাবেই থাকতে হবে। কারণ দেশে এটি দরকার। যেভাবে ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কারো মতে এই আইনটা খুবই খারাপ, পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। আবার কারো মতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারায় সংশোধনী এনে এটাকেই আপটুডেট রাখা। যে কথা গুলো স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেগুলোকে বাদ দেয়া। কিন্তু আইনটা দরকার আছে। কারণ, যেভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ করা হচ্ছে তাতে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দরকার আছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অনেক স্বাধীনতা দেয়া আছে, তবে এই স্বাধীনতার মাধ্যমে কোন অন্যায় কাজ করা যাবে না, এই স্বাধীনতার মাধ্যমে ন্যায় কাজ করতে হবে। এসময় ইউরোপের উন্নত রাষ্ট্র জার্মানীর উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, এখনো সেখানে হিটলারের পক্ষে কথা বলা যায় না।

সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরি ও মান নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মান নির্ধারণে পিআইবিসহ প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের সব পক্ষকে নিয়ে বসেছে, সেখানে সাংবাদিকদের মান নির্ধারণসহ ডাটাবেজ তৈরির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশ সাংবাদিক প্রস্তাব করেছেন সাংবাদিকতার নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে গ্রাজুয়েট। আমরা প্রস্তাব করলাম পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা কম কিন্তু মিনিমাম পাঁচবছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তারাও সাংবাদিক হিসেবে থাকতে পারবেন। সে অনুযায়ী প্রেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে সাংবাদিকদের সব তথ্য সংগ্রহ করে প্রেস কাউন্সিলে পাঠানোর জন্য।

এই কাজ গুলো শেষ হলেই ডাটাবেজ তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। এই ডাটাবেজ থাকবে প্রেস কাউন্সিলের কাছে, থাকবে সরকারের কাছে। ডাটাবেজে থাকা তথ্য গুলো সঠিক কী না তাও ৬ মাস পর পর যাচাই করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের নীতিমালা করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী সাংবাদিকরা পত্রিকার সম্পাদকের কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সব কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেবেন,জেলা প্রশাসক সেগুলো প্রেস কাউন্সিলে পাঠাবেন। সম্প্রতি পিআইবি সারাদেশে ডাটাবেজ তৈরির জন্য সাংবাদিকদের যে তথ্য সংগ্রহ করেছে, সেটিও আমাদের কাছে জমা দেবে, আমরা সব ডাটাবেজ সমন্নয় করেই চুড়ান্ত ডাটাবেজ তৈরি করব।

সেমিনার ও মতবিনিময় শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তথ্য সচিব মাসুদ খান। এর পর প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যানের কাছে দেশব্যাপী সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরি অগ্রগতি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক হয়রানী, সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি, কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদান, জেলা প্রর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরে তথ্যে প্রাপ্তির ক্ষেতে হয়রানীসহ পেশাগত দ্বায়িত্ব পালনে নানা অসঙ্গতি নিয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তাপন করেন। সাংবাদিকদের এসব প্রস্তাবনা আর প্রশ্ন উত্তাপন শেষ হলে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এসব প্রশ্নের উত্তর দেন।

(একে/এসপি/মে ১৬, ২০২৩)