রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়া, অধিক তাপমাত্রায় আম আকারে ছোট ও দাগযুক্ত হওয়া, ঘুর্ণিঝড় মোখা ও চলমান ঝড়বৃষ্টির কারণে পেড়ে ফেলতে বাধ্য হওয়ায় সাতক্ষীরার কৃষকরা আমের দাম ভাল পাচ্ছেন না।  এ ছাড়া অনলাইনে সরাসরি বাগান থেকে আম বিক্রি হওয়ায় ব্যবসায়িরা সাতক্ষীরায় কম আসায় চাষী ও ব্যবসায়িরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সাতক্ষীরার আম চাষী বাবুলিয়ার কাওছার আলী জানান, বেলে দোঁয়াশ মাটি ও জলবায়ুর কারণে সাতক্ষীরার আম খুব সুস্বাদু। এখানকার আম বিষ মুক্ত। গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আম সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার, আবাদের হাট, ব্যাংদহা বাজার, পারুলিয়া বাজার, বুধহাটা বাজার,কুশুলিয়া হাট, নকীপুর বাজার, পাটকেলঘাটা বাজার কলারোয়াবাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে ২০ থেকে ২২ হাজার মন করে বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র সুলতানপুর বড়বাজারেই রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি আমের আড়ৎ। কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে মিলবে ন্যাংড়া ও আম্রপালি আম।

কাশেমপুরের শহীদুল ইসলাম জানান, যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমের আকার ছোট হয়েছে। আমে দেখা যাচ্ছে কালো কালো দাগ। এরইমধ্যে ঘুর্ণিঝড় মোখার কারণে অনেকেই তড়িঘড়ি করে আম পাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই আম পেড়ে নিচ্ছেন। গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছে আম। একসাথে আম পেড়ে ফেলায় চাষী ও ব্যবসায়ীরা গত বারের তুলনায় এবার আমের দাম কম পাচ্ছেন। অনলাইনে আম বিক্রির ফলে ব্যবসায়ি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাগান মালিকদের কাছ থেকে আম কিনছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সময়ে আম পেকে যাওয়ায়ও সরকারিভাবেও আম এখনো বিদেশে না যাওয়ায় ব্যবসায়িরা খুব কম আসছেন সাতক্ষীরায়। এসব কারণে আম চাষী ও ব্যবসায়িরা এবার ন্যয্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সুলতানপুর বড়বাজারের আড়ৎদার ইদ্রিস আলী জানান, ১০ বছর ধরে আমের আড়ৎদারি করছেন। প্রচণ্ড গরম ও যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আম ছোট হয়েছে। গায়ে কালো কালো দাগ। বাজারে গত বারের তুলনায় দাম অর্ধেক। আম চাষী ও ব্যবসায়িদের মাথায় হাত।

আমের আড়ৎদার মোকছেদ আলী জানান,এবার বাজারে প্রচুর আম। ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। গতবারে এ সময় হিমসাগর আম বিক্রি হয়েছে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। তবে এখনো ন্যাংড়া আম পাড়া শুরু হয়নি। তবে সরকারিভাবে আম বিদেশে গেলে বাইরের ব্যবসায়িরা বেশি করে সাতক্ষীরায় এলে ভাল আম পাওয়া যেতো।

আম ব্যবসায়ি শেখ আহছান আলী বলেন, ঝড়ের কারণে আম দ্রুত ভেঙে বাজারজাত করা হয়েছে। ঘ তবে আম ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন,অনলাইনের কারণে ব্যবসায়িরা সরাসরি বাগান থেকে আম কিনছে। বাজারে আসছে না। চাষীরাা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আম চাষী ছাতিয়ানতলার আনন্দ দাস বলেন, তার বাগানের আম কেমিকেল মুক্ত, বিষমুক্ত আম। সুস্বাদু। বিদেশে যায়।

আম ক্রেতা রইচপুরের জনাব আলী বলেন, ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ আম পাচ্ছি। আত্মীয় স্বজনদের পাঠাচ্ছি। গত বারের চেয়ে দাম কম। বাগান থেকেও প্রসেস করা আম এক থেকে দেড়’শ টাকা বেশি দিয়ে ভোক্তারা কিনছে।

সুলতানপুর পাকা ও কাঁচামাল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন,
এবার আম চাষীরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত। আম বিক্রি নেই। সরকারিভাবে আম সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করা গেলে কৃষক ও ব্যবসায়িরা আমের ভাল দাম পেতে পারেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, এবার জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টণ। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড়গুণ আম উৎপাদন হয়েছে। কৃষক ও ব্যবসায়িরা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেজন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ভাল মানের আমের ভাল দাম আছে বলে তিনি দাবি করেন।

(আরকে/এসপি/মে ১৯, ২০২৩)