শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে প্রথম বারের মত বাণিজ্যিকভাবে কুকুরের খামার দিয়েছেন জাহিদ ইসলাম সোহাগ নামে এক যুবক। বিদেশি হরেক জাতের কুকুর পালনসহ প্রজনন করিয়ে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অনলাইন মার্কেটিংসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা,সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা তার ফার্ম থেকে কুকুর সংগ্রহ করছেন। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কুকুর লালন পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। 

দিনাজপুর শহরে থেকে দুই কিলেমিটার উত্তরে চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর নয়নপুর এলাকায় ‘ডগ হাউজ’ নামে এই কুকুরের খামার। প্রায় সাড়ে ৮ বছর আগে সখের বশে জাহিদ ইসলাম সোহাগ প্রথমে একটি ও পরে দু’টি বিদেশী কুকুর নিয়ে শুরু করেন, এই খামারের যাত্রা। কুকুরের প্রথমে ৩ টি ও পরে ৭টি বাচ্চা প্রজননের মাধ্যমে তার ভাগ্য খুলে যায়। অনলাইন মার্কেটিং এর মাধ্যমে তিনি শুরু করেন কুকুর বিক্রি। অধিক লাভে তিনি শুরু করেন,বিভিন্ন জাতের বিদেশি কুকুর সংগ্রহ ও প্রজনন প্রক্রিয়া।

জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, এখন তার খামারে আমেরিকান লাসা, টয় কোয়ারিয়ান, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মানি শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ ৯ প্রজাতির ৩২টি কুকুর রয়েছে। প্রকার ভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তিনি।বানিজ্যিক ভাবে কুকুর বিক্রি’তে তার প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হয়।

সরজমিনে দেখা গেল,এই কুকুরের খামারটি দেখাশোনা ও পরিচর্যায় নিয়োজিত হয়েছে তিন শ্রমিক। এরমধ্যে এক শিশু শ্রমিকের বেশ ভক্ত কুকুরগুলো। এই শিশু শুমিকের সাথে কুকুরগুলো খেলা করছে। ছুঁটছে, লাফিয়ে উপরে উঠছে, হ্যান্ডশেক করছে।

এলাকাবাসীও খুশি তার কুকুরের খামারের বর্তমান পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে।


মকবুল হোসেন নামে এক এলাকাবাসী জানান, ‘কুকুরগুলো বেশ প্রভুভক্ত। সোহাগ ভাই এবং তার লোকজন যা বলে কুকুরগুলো তাই শুনে। চুপ খাকতে বললে কুকুরগুলো মাথা নিচু করে বসে বা শুয়ে পড়ে। আর কোন লাফালাফি করেনা।’

তার কুকুরের খামার দেখার জন্য দুর-দূরান্ত থেকে ছুঁটে আসছেন,অনেকেই। পরিবেশ পরিরিস্থিতে বিবেচনায় অনেকে এভাবে কুকুরের খামার দিতে আগ্রহী হচ্ছেন।

নীলফামারী জেলা থেকে আগত হাসান আলী জানালেন, ‘কুকুরগুলো বেশ সুন্দর। দেখে ভালো লাগলো। আমিও দু’টি কুকুর নিতে চাই। ইচ্ছে আছে খামার দেয়ার।’

জেলায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে কুকুরের খামার গড়ে ওঠায় স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সজাগ রয়েছেন।খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন ছাড়াও কুকুর লালন পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছেন বলে জানালেন,সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া।

তিনি বলেন, ‘সতর্কতা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে খামারটি পরিচালিত হলে খামারী বেশ লাভবান হবেন। কোন ক্রমে যাতে রোগ-জীবাণু না ছড়ায় সেদিকে বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে। সতর্ক খাকতে হবে সব সময়। কারণ, এখানে হিংস্র জাতের কুকুরও রয়েছে।’

বিশ্বস্ত ও প্রভুভক্ত হওয়ায় কুকুরের প্রতি বেশ কদর রয়েছে মানুষের। সোহাগের এই কুকুরের খামারটি কর্ম সংস্থানে অনেকের হতে পারে অনুপ্রেরণা।

(এসএএস/এএস/মে ২৬, ২০২৩)