আবীর আহাদ


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শত্রু। তাদের প্রতি বাংলাদেশের প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একবিন্দু আস্থা নেই। ক্ষমতার রাজনীতি ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও আমলারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমীহ করে। ভয় করে। ফলে তারা তাদের স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তোয়াজ করে চলে। এ সুযোগ গ্রহণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব চক্রকে তাদের পক্ষে অবস্থান নিতে চান সৃষ্টি করে। বাধ্য করে। বিশেষ করে দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও প্রতারক রাজনীতিকরা ক্ষমতা ও আর্থিক লাভালাভের স্বার্থে মার্কিনিদের পাশাপাশি বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়লে অমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যতম অস্ত্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন), ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ আরো কঠিন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। অতীতে তারা বহু দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনৈতিক নেতাদের হত্যাসহ গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করেছঃ।

যেমন সম্প্রতি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে এক নতুন ভিসা নীতির কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই নীতির আওতায় যে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি সেদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় - তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ৩রা মে এ কথা ঘোষণা করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এর আওতায় পড়বেন বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা।

আমাদের কী লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় যে, ১৯৭১ সালে বলাচলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সীমাহীন রক্ত ও বীরত্ব দিয়ে স্বাধীন করেছিলাম, সেই দেশের রাজনৈতিক নেতা আমলা ও ব্যবসায়ীদের ক্ষমতা ও লুটপাটের পারস্পরিক অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী দু:সাহস নিয়ে আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে ছড়ি ঘুরাচ্ছে! এত কিছুর পরে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের কবে শুভবুদ্ধির উদয় হবে তা কে জানে? তবে প্রত্যেক ক্রিয়ার মধ্যে প্রতিক্রিয়া নিহিত থাকে। তেমনি। মার্কিন এ পদক্ষেপটি আপাতত: আমাদের দেশের সম্মানের ওপর নগ্ন হামলা হলেও, এ ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে দুর্নীতিবাজ লুটেরা রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি ও লুটপাটের অবৈধ অর্থসম্পদ বিদেশে পাচারের পথে একটা বাধা সৃষ্টি হবে বলে মনে হয়।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।