ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


বিশ্ব ডাইজেস্টিভ স্বাস্থ্য দিবস’ বা ‘বিশ্ব পরিপাক স্বাস্থ্য দিবস’ ২০২৩। পরিপাকতন্ত্র মানবশরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। অন্ত্রনালি ছাড়াও লিভার, প্যানক্রিয়াস, পিত্তথলি, পিত্তনালি এই তন্ত্রের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীরের এই অংশের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অর্গানাইজেশন প্রতিবছর ২৯ মে-কে ‘বিশ্ব ডাইজেস্টিভ স্বাস্থ্য দিবস’ বা ‘বিশ্ব পরিপাক স্বাস্থ্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।

পরিপাক ও পরিপাকতন্ত্র

অধিকাংশ খাদ্য জটিল এবং জৈব যৌগ অবস্থায় গ্রহণ করা হয়। দেহের কোষগুলো তা সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না। খাদ্যকে শোষণযোগ্য ও কোষ উপযোগী করতে হলে তাকে ভেঙে সহজ, সরল এবং তরল অবস্থায় রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিপাক।

দেহে দুভাবে খাদ্য শোষিত হওয়ার উপযোগী হয়, যান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়া।

যান্ত্রিক প্রক্রিয়া: খাদ্যদ্রব্য মুখগহ্বরে দাঁতের সাহায্যে চিবানো হয়। প্রথমত চিবানোর ফলে খাদ্যবস্তু ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়। পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মধ্যে এই টুকরা খাদ্যবস্তুগুলো মণ্ডে পরিণত হয়।

রাসায়নিক বিক্রিয়া: রাসায়নিক প্রক্রিয়া পরিপাকের দ্বিতীয় ধাপ। পরিপাক রসের এনজাইম খাদ্যের রাসায়নিক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। এতে খাদ্যের জটিল উপাদানগুলো ভেঙে দেহের গ্রহণযোগ্য সরল উপাদানে পরিণত হয়।

পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র

যে তন্ত্রের সাহায্যে খাদ্যদ্রব্য ভেঙে দেহের গ্রহণ উপযোগী উপাদানে পরিণত ও শোষিত হয়, তাকে পৌষ্টিকতন্ত্র বলে। এ তন্ত্রটি পৌষ্টিকনালি এবং কয়েকটি গ্রন্থি নিয়ে গঠিত। পৌষ্টিকনালি মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ুতে শেষ হয়।

পৌষ্টিকনালি। মুখগহ্বর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত বিস্তৃত এই নালিপথ কোথাও সরু আবার কোথাও প্রশস্ত।
এর প্রধান অংশগুলো নিম্নরূপ:

মুখ : মুখ থেকে পৌষ্টিকনালির শুরু হয়। এটি নাকের নিচে আড়াআড়ি একটি বড় ছিদ্র, যেটি উপরে এবং নিচে ঠোঁট দিয়ে বেষ্টিত থাকে।

মুখগহ্বর : মুখের অভ্যন্তরে দাঁত, জিহ্বা ও লালাগ্রন্থি থাকে। এগুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। দাঁত খাদ্যকে চিবিয়ে ছোট ছোট অংশে পরিণত করে। জিহ্বা খাদ্যবস্তুকে নেড়েচেড়ে চিবাতে সাহায্য করে এবং তার স্বাদ গ্রহণ করে। মুখের ভিতরের লালাগ্রন্থি থেকে এনজাইম ক্ষরণ হয়। এই গ্রন্থিগুলো কানের নিচে চোয়ালের পাশে এবং জিহ্বার নিচে অবস্থিত। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসের মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে গলাধঃকরণে সাহায্য করে। লালারসের টায়ালিন ও মলটেজ নামক এনজাইম শর্করা পরিপাকে অংশ নেয়।

দাঁত :-মানবদেহে সবচেয়ে শক্ত অংশ দাঁত। প্রাপ্ত বয়সে মুখগহ্বরে উপরে ও নিচের চোয়ালে সাধারণত ১৬ টি করে মোট ৩২ টি দাঁত থাকে। মানবদেহে দাঁত দুবার গজায়। প্রথমবার শিশুকালে দুধদাঁত, দুধদাঁত পড়ে গিয়ে ১৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার স্থায়ী দাঁত গজায়।

মানুষের স্থায়ী দাঁত চার ধরনের। সেগুলো হচ্ছে:

(i) কৰ্তন দাঁত : এই দাঁত দিয়ে খাবার কেটে টুকরা করা হয়।

(ii) ছেদন দাঁত : এই দাঁত দিয়ে খাবার ছেঁড়া হয়।

(iii) অগ্রপেষণ দাঁত : এই দাঁত দিয়ে চর্বণ, পেষণ উভয় কাজ করা হয়।

(iv) পেষণ দাঁত : এই দাঁত খাদ্যবস্তু চর্বণ ও পেষণে ব্যবহৃত হয়।

বিভিন্ন ধরনের দাঁত, উপরের পাটি (বামে) এবং নিচের পাটি (ডানে)

গলবিল :-মুখগহ্বরের পরের অংশ গলবিল। মুখগহ্বর থেকে খাদ্যবস্তু গলবিলের মধ্য দিয়ে অন্ননালিতে পৌঁছে।

অন্ননালি:-গলবিল থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত বিস্তৃত নালিটির নাম অন্ননালি। খাদ্যবস্তু এই নালির মধ্যে দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে।

পাকস্থলী:-অন্ননালি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের মাঝখানে একটি থলির মতো অঙ্গ। এর প্রাচীর পুরু ও পেশিবহুল। পাকস্থলীর প্রাচীরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থাকে। পাকস্থলীর পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুকে পিষে মণ্ডে পরিণত করে। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।

অন্ত্র:-পাকস্থলীর পরের অংশ অন্ত্র। এটি একটি লম্বা প্যাঁচানো নালি। অন্ত্র দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্ৰ।

(i) ক্ষুদ্রান্ত্র : পাকস্থলী থেকে বৃহদন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা, প্যাঁচানো নলটিকে ক্ষুদ্রান্ত্র বলে। ক্ষুদ্রান্ত্র আবার তিনটি অংশে বিভক্তঃ ডিওডেনাম, জেজুনাম ও ইলিয়াম। ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে পিত্তথলি থেকে পিত্তনালি এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় নালি এসে মিলিত হয়। পিত্তনালির মাধ্যমে যকৃতের পিত্তরস এবং অগ্ন্যাশয়ের অগ্ন্যাশয় রস ডিওডেনামে এসে পৌঁছে। ক্ষুদ্রান্ত্রের গায়ে আন্ত্রিক গ্রন্থিও থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরে আঙুলের মতো প্রক্ষেপিত অংশ থাকে, এদের ভিলাস বলে। ভিলাস পরিপাককৃত খাদ্য উপাদান শোষণ করে।

(ii) বৃহদন্ত্ৰ : ইলিয়াম থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা নলাকৃতির অংশ হলো বৃহদন্ত্র। বৃহদন্ত্র তিনটি অংশে বিভক্তঃ সিকাম, কোলন ও মলাশয়। সিকামের সাথে অ্যাপেনডিক্স নামক ক্ষুদ্র নলের মতো প্রবৃদ্ধি সংযুক্ত থাকে। বৃহদন্ত্রে মূলত পানি শোষিত হয়, মল তৈরি হয় এবং মল জমা থাকে।

পায়ু : পৌষ্টিক নালির শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছিদ্রপথই হলো পায়ু।

পৌষ্টিক গ্রন্থি : যেসব গ্রন্থির রস খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয় তাদেরকে পরিপাকগ্রন্থি বা পৌষ্টিকগ্রন্থি বলে। মানবদেহে পৌষ্টিকগ্রন্থিগুলো হলো:

লালা গ্রন্থি : মানুষের তিন জোড়া লালাগ্রন্থি আছে। দুই কানের সামনে ও নিচে এক জোড়া (প্যারোটিডগ্রন্থি), চোয়ালের নিচে একজোড়া (সাব-ম্যান্ডিবুলার) এবং চিবুকের নিচে একজোড়া (সাব-লিঙ্গুয়ালগ্রন্থি)। এগুলো পৃথক পৃথক নালির মাধ্যমে মুখগহ্বরে উন্মুক্ত হয়। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস, লালা নামে পরিচিত। লালা রসে টায়ালিন নামক এনজাইম এবং পানি থাকে।

যকৃৎ : মধ্যচ্ছদার নিচে উদরগহ্বরের উপরে পাকস্থলীর ডান পাশে যকৃৎ অবস্থিত। এটি মানবদেহের সবচেরে বড় গ্রন্থি। এর রং লালচে খয়েরি। যকৃতের ডান খণ্ডটি বাম খণ্ড থেকে আকারে কিছুটা বড়। প্রকৃতপক্ষে চারটি অসম্পূর্ণ খণ্ড নিয়ে যকৃৎ গঠিত। প্রতিটি খণ্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোবিউল দিয়ে তৈরি। প্রত্যেকটি লোবিউলে অসংখ্য কোষ থাকে। এ কোষ পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরস ক্ষারীয় গুণ সম্পন্ন। যকৃতে বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তাই একে রসায়ন গবেষণাগার বলা হয়।

যকৃতের নিচের অংশ পিত্তথলি বা পিত্তাশয় সংলগ্ন থাকে। এখানে পিত্তরস জমা হয়। পিত্তরস গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং তিক্ত স্বাদবিশিষ্ট। পিত্তথলি পিত্তনালির সাহায্যে অগ্ন্যাশয় নালির সাথে মিলিত হয়। যকৃৎ-অগ্ন্যাশয় নালির মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে।

যকৃতের কাজ: -যকৃৎ পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরসের মধ্যে পানি, পিত্ত-লবণ, কোলেস্টেরল ও লবণ প্রধান। এই রস পিত্তথলিতে জমা থাকে।

পিত্তরসে কোনো উৎসেচক বা এনজাইম থাকে না। যকৃৎ পরিপাকে উদ্বৃত্ত গ্লুকোজ নিজদেহে গ্লাইকোজেনরূপে সঞ্চয় করে রাখে।

পিত্তরস খাদ্যের অম্লভাব প্রশমিত করে এবং ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই পরিবেশ খাদ্য পরিপাকের অনুকূল। কেননা আম্লিক পরিবেশে খাদ্য পরিপাক হয় না।

পিত্তরস চর্বিজাতীয় খাদ্যকে ক্ষুদ্র দানায় পরিণত করে, যা লাইপেজ সহযোগে পরিপাকে সহায়তা করে। অতিরিক্ত অ্যামাইনো এসিড যকৃতে আসার পর বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ও অ্যামোনিয়ারূপে নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে এবং স্নেহজাতীয় পদার্থ শোষণে সাহায্য করে।

রক্তে কখনো গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে যকৃতের সঞ্চিত গ্লাইকোজেনের কিছুটা অংশ গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তস্রোতে মিশে যায়। এভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।

অগ্ন্যাশয় : অগ্ন্যাশয় পাকস্থলীর পিছনে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্রগ্রন্থি। এটি একাধারে পরিপাকে অংশগ্রহণকারী এনজাইম ও রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নিঃসৃত করে। অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মতো কাজ করে। অগ্ন্যাশয়রস অগ্ন্যাশয় নালির মাধ্যমে যকৃৎ অগ্ন্যাশয়নালি দিয়ে ডিওডেনামে প্রবেশ করে।

অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয়রস নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয়রসে ট্রিপসিন, লাইপেজ ও অ্যামাইলেজ নামক উৎসেচক থাকে। এসব এনজাইম শর্করা, আমিষ এবং স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিপাকে সহায়তা করে। তাছাড়াও অম্ল-ক্ষারের সাম্যতা, পানির সাম্যতা, দেহতাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে অগ্ন্যাশয়ের একটি অংশ অতি প্রয়োজনীয় কিছু হরমোন, যেমন: গ্লুকাগন ও ইনস্যুলিন নিঃসরণ করে। গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কাজে এ হরমোন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি : গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি পাকস্থলীর প্রাচীরে থাকে। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস (ট্রিপসিন, লাইপেজ, অ্যামাইলেজ) গ্যাস্ট্রিক রস বা পাচক রস নামে পরিচিত।

আন্ত্রিকগ্রন্থি : ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরে ভিলাইয়ে আন্ত্রিকগ্রন্থি থাকে। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসের নাম আন্ত্রিক রস।

খাদ্য পরিপাক ক্রিয়া যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মানুষের পৌষ্টিক নালির অভ্যন্তরে জটিল, অদ্রবণীয়, অশোষণযোগ্য খাদ্য উপাদানগুলো নির্দিষ্ট উৎসেচক বা এনজাইম এবং প্রাণরস বা হরমোনের উপস্থিতিতে বিশ্লেষিত হয়ে শোষণযোগ্য এবং দ্রবণীয় সরল উপাদানে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে।

মুখে পরিপাক : মুখগহ্বরে দাঁত ও জিহ্বার সাহায্যে খাদ্য চিবানোর ফলে খাদ্যবস্তু ছোট ছোট টুকরোয় পরিণত হয়। এ সময় লালাগ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয়ে খাদ্যের সাথে মিশে যায়। লালা খাদ্যবস্তুকে গলাধঃকরণে সাহায্য করে। লালায় টায়ালিন বা স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ নামক উৎসেচক বা এনজাইম থাকে। এটি শ্বেতসারকে মলটোজে পরিণত করে। মুখগহ্বরে আমিষ বা স্নেহজাতীয় খাদ্যের কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না।

মুখগহ্বর থেকে খাদ্যদ্রব্য পেরিস্টালসিস প্রক্রিয়ায় অন্ননালির মধ্য দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। পৌষ্টিক নালিগাত্রের পেশির পর্যায়ক্রমিক সংকোচন ও প্রসারণের ফলে খাদ্যদ্রব্য সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অন্ননালিতে খাদ্যের কোনো পরিপাক ঘটে না।

পাকস্থলী পরিপাক : পাকস্থলীতে খাদ্য আসার পর অন্তঃপ্রাচীরের গ্যাস্ট্রিকগ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরিত হয়। এই রসে প্রধান যে উপাদানগুলো থাকে তা হলো:

হাইড্রোক্লোরিক এসিড : হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যের মধ্যে কোনো অনিষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা মেরে ফেলে, নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে পরিণত করে এবং পাকস্থলীতে পেপসিনের সুষ্ঠু কাজের জন্য অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেন HCL → সক্রিয় পেপসিন

পেপসিন : এক ধরনের এনজাইম, যা আমিষকে ভেঙে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি যৌগ গঠন করে, যা পলি পেপটাইড নামে পরিচিত।

পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানো মাত্র উপরোক্ত রসগুলো নিঃসৃত হয়। পাকস্থলীর অনবরত সংকোচন ও প্রসারণ এবং এনজাইমের ক্রিয়ার ফলে খাদ্য মিশ্র মণ্ডে পরিণত হয়। একে পাকমণ্ড বা কাইমবলে। এই মণ্ড অনেকটা স্যুপের মতো এবং কপাটিকা ভেদ করে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে।

ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাক : পাকস্থলী থেকে পাকমণ্ড ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে প্রবেশ করে। এ সময় অগ্ন্যাশয় থেকে একটি ক্ষারীয় পাচকরস ডিওডেনামে আসে। এই পাচকরস খাদ্যমণ্ডের অম্লভাব প্রশমিত করে। পাচকরসের এনজাইম দিয়ে শর্করা এবং আমিষ পরিপাকের কাজ চলতে থাকে এবং স্নেহপদার্থের পরিপাক শুরু হয়।

যকৃৎ থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়। এটি অম্লীয় অবস্থায় খাদ্যকে ক্ষারীয় করে পরিপাকের উপযোগী করে তোলে। পিত্ত-লবণ স্নেহপদার্থের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে পানির সাথে মিশতে সাহায্যে করে। পিত্ত লবণ পিত্তরসের অন্যতম উপাদান। লাইপেজ নামক এনজাইমের কাজ যথাযথ সম্পাদনের জন্য পিত্ত-লবণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ লবণের সংস্পর্শে স্নেহপদার্থ সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানায় পরিণত হয়। স্নেহবিশ্লেষক লাইপেজ এই দানাগুলোকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারলে পরিণত করে।

বৃহদন্ত্র পরিপাক : কোলনে পাকমণ্ডের কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া বা পরিপাক ঘটে না। তবে খাদ্যের অসার অংশের সাথে যে পানি থাকে, তা এখানে শোষিত হয়। তাছাড়া থাকে কিছু আমিষ, লিপিড, লবণ এবং উদ্বৃত্ত এনজাইম। এসব বস্তু থেকে বৃহদন্ত্র লবণ ও পানি শোষণ করে রক্তে স্থানান্তরিত করে। ফলে উচ্ছিষ্ট খাদ্য ঘনীভূত হয়ে মলে পরিণত হয়। এই মল মলাশয়ে জমা থাকে এবং প্রয়োজনমতো পায়ুপথ দিয়ে বের হয়ে আসে।

আত্তীকরণ: শোষিত খাদ্যবস্তুর প্রোটোপ্লাজমে পরিণত বা রূপান্তরিত করার পদ্ধতি হলো আত্তীকরণ। এটা একটি গঠনমূলক বা উপচিতি প্রক্রিয়া। কোষের প্রোটোপ্লাজম নিঃসৃত এনজাইমের সহযোগিতায় সরল খাদ্য জটিল উপাদানে পরিণত হয়। যেমন অ্যামাইনো এসিড, গ্লুকোজ, ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারল রক্তের সাহায্যে দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এসব স্থানে প্রোটোপ্লাজম নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে আমিষ, স্নেহ এবং শর্করা তৈরি হয়।

আন্ত্রিক সমস্যা

অজীর্ণতা : পেটের উপরের দিকে ব্যথা, পেট ফাঁপা, পেট ভরা মনে হওয়া, বুক জ্বালা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, বুক ব্যথা, টক ঢেঁকুর উঠা— এগুলো অজীর্ণতার লক্ষণ। পাকস্থলী বা অন্ত্রের আলসারের কারণে হজমে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। একে সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক বলে থাকে, যদিও সঠিক নামটি হলো পেপটিক আলসার।

আমাশয় : নামক এক ধরণের প্রোটোজোয়া, নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণুর সংক্রমণে আমাশয় হয়। ঘন ঘন মলত্যাগ, মলের সাথে শ্লেষ্মা বের হওয়া, পেটে ব্যথা, অনেক সময় শ্লেষ্মাযুক্ত মলের সাথে রক্ত যাওয়া এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য হজম না হওয়া আমাশয় রোগের লক্ষণ।

কোষ্ঠকাঠিন্য: যখন কারো শক্ত পায়খানা হয় কিংবা দুই বা তারও বেশি দিন পায়খানা হয় না, এ অবস্থাকে বলা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, যেমন: পায়খানার বেগ চেপে রাখলে, বৃহদন্ত্রে অপাচ্য খাদ্যাংশ থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষিত হলে, পৌষ্টিক নালির মধ্য দিয়ে খাদ্যের অপাচ্য অংশ ধীরে ধীরে গমনে মল থেকে বেশি পানি শোষিত হলে। আবার পরিশ্রম না করলে, আন্ত্রিক গোলযোগে, কোলনের মাংসপেশি স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরে ধীরে সংকুচিত হলে, রাফেজ বা আঁশযুক্ত খাবার না খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

গ্যাস্ট্রিক ও পেপটিক আলসার

আলসার বলতে যেকোনো এপিথেলিয়াম বা আবরণী টিস্যুর একধরনের ক্ষত বোঝায়। পেপটিক আলসার বলতে খাদ্যনালির কোনো অংশের আলসার বোঝায়। সেটি যদি পাকস্থলীতে হয় তাহলে তাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডিওডেনামে হলে ডিওডেনাল আলসার বলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যগ্রহণে অনিয়ম হলে পাকস্থলীতে অম্লের আধিক্য ঘটে এবং অনেক দিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে এই অম্ল বা এসিড দিয়ে পাকস্থলী বা অন্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে পেপটিক আলসার হতে পাঠে।

পেপটিক আলসার রোগে সাধারণত পেটের ঠিক মাঝ বরাবর, নাভির একটু উপরে একঘেয়ে ব্যথা অনুভূত হয়। খালি পেটে বা অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাদ্য খেলে ব্যথা বাড়ে। আলসার মারাত্মক হলে বমি হতে পারে। কখনো কখনো বমি এবং মলের সাথে রক্ত নির্গত হয়। এন্ডোসকপি বা বেরিয়াম এক্স-রের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

অ্যাপেনডিসাইটিস : পেটের ডান দিকের নিচে বৃহদন্ত্রের সিকামের সাথে অ্যাপেনডিক্স যুক্ত থাকে। এটি আঙ্গুলের আকারের একটি থলে। অ্যাপেনডিক্সের সংক্রমণের কারণে অ্যাপেনডিসাইটিস হয়। এ রোগে প্রথমে নাভির চারদিকে ব্যথা অনুভব হয় এবং ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তলপেটের ডান দিকে সরে যায়। ক্ষুধামন্দ্যা, বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

কৃমিজনিত রোগ: মানুষের অন্ত্রে গোলকৃমি, সুতাকৃমি ও ফিতাকৃমি পরজীবী হিসেবে বাস করে। কৃমির কারণে পেটে ব্যথা, দুর্বলবোধ, বদহজম, পেটে অস্বস্তিবোধ, বমি বমি ভাব, অনিদ্রা, খাওয়ায় অরুচি, রোগীর চেহারা ফ্যাকাশে হওয়া, রক্তাল্পতা দেখা দেওয়া, হাত-পা ফুলে যাওয়া, পেট বড় হয়ে ফুলে উঠা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। শিশুর জ্বর হলে অনেক সময় মলের সাথে এমনকি নাক-মুখ দিয়ে কৃমি বেরিয়ে আসে।

ডায়রিয়া: যদি দিনে অন্তত তিনবার পাতলা পায়খানা হয়, তবে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে মনে করতে হবে। ডায়রিয়া হলে রোগীর দেহ থেকে পানি এবং লবণ বেরিয়ে যায়, দেহের পানি কমে যায়, রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে দেহে পানি এবং লবণের স্বল্পতা দেখা দেয়।

ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া, বারবার বমি হওয়া, খুব পিপাসা লাগা, মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া, দেহের চামড়া কুঁচকে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া ইত্যাদি ডায়রিয়ার উপসর্গ। এ সময় রোগী খাবার বা পানীয় ঠিকমতো খেতে চায় না, শিশুর মাথার চাঁদি বা তালু বসে যায়। আস্তে আস্তে রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী করার উপায়

অতিরিক্ত খাবার খাবেন না: পরিপাকতন্ত্র ঠিক করতে প্রয়োজনের বেশি খাবেন না। অত্যধিক খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, বেশির ভাগ মানুষই স্বাদে চাহিদার চেয়ে বেশি খায় এবং পরে বদহজমের সমস্যায় ভোগে এবং তাদের আফসোস করতে হয় যে আপনার যতটা ক্ষুধার্ত ততটা খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খাওয়া আমাদের পরিপাকতন্ত্রের উপর বেশি চাপ দেয়, যার ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের অবনতি ঘটে।

খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করবেন না : অনেকেই আছেন যারা খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করেন। কিন্তু আপনি এটা একেবারেই করবেন না, খাবার খাওয়ার পরপরই পানি পান করা উচিত নয়। কারণ আমরা যখন খাবার খাই তখন আমাদের পরিপাকতন্ত্র হজমের অ্যাসিড নিঃসরণ করে। যারা খাবার হজম করার কাজ করে, কিন্তু আমরা যখন খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করি, তখন সেই পানিতে পরিপাককারী অ্যাসিড পাওয়া যায় যা পরিপাকতন্ত্র খাবারে হজম করতে পারে না এবং তা শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং আমাদের বদহজম হয়।

বাইরের জাঙ্ক ফুড খাবেন না: সুস্বাদু হওয়ায় জাঙ্ক ফুড খেতে সবাই পছন্দ করে। কেউ এটা খেতে বেশি পছন্দ করেন আবার কেউ কম পছন্দ করেন। যে বেশি খেতে পছন্দ করে সে খারাপ পরিপাকতন্ত্রের শিকার হয়। জাঙ্ক ফুড আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাসে দুবার খেতে পারেন। কিন্তু বেশি খাওয়ার ফলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়।

প্রচুর পানি পান করুন: অনেকেই খুব অল্প পরিমাণে পানি পান করেন। এবং শুধুমাত্র এই ধরনের মানুষ দুর্বল পাচনতন্ত্রের শিকার হয়। আমাদের প্রতিদিন প্রায় ২ লিটার পানি পান করা উচিত। যাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল তারাও ২ লিটারের বেশি পান করতে পারেন। পানি আমাদের শরীরে পানির পরিমাণ বাড়ায় ফলে পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। তবে মনে রাখবেন খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করা উচিত নয়।

দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করবেন না: অনেকে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেন। কিন্তু একেবারেই করবেন না। যদি আপনার কাজ অফিসে হয় এবং আপনাকে কম্পিউটারে বসে কাজ করতে হয়, তবে আপনাকে এর মধ্যে কয়েক মিনিট হাঁটতে হবে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র খাবার হজম করতে পারে না, যার ফলে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

প্রতিদিন উপযুক্ত সময়ে খান

আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত। অনেক মানুষ আছে যারা যখন ইচ্ছা খায়। এটা একেবারেই করবেন না। আমাদের পরিপাকতন্ত্র খাবার হজম করতে সময় নেয়। এমন অবস্থায় আপনি যখন বারবার খাবেন, তখন আপনার পরিপাকতন্ত্র খাবার হজম করতে পারবে না এবং আপনার বদহজম হবে। তাই এটি এড়াতে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে।

বেশি রাত জাগবেন না

অনেকেই আছেন যারা কাজ করতে বা সিনেমা দেখতে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। আর সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। এটি করা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। আপনি যদি রাতে দেরি করে ঘুমান তাহলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের অবনতি হতে বাধ্য। তাই এটি এড়াতে খাবার খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটুন এবং তারপর ঘুমাতে যান।

_ ধূমপান, অ্যালকোহল আসক্তি এড়িয়ে চলুন
ধূমপান, অ্যালকোহল আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা আমাদের বলার দরকার নেই। এই সমস্ত লোকেরা জানেন যে ধূমপান এবং মদ্যপান ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তারপরও মানুষ তা গ্রাস করে। ধূমপান আমাদের পরিপাকতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে। এর ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের অবনতি ঘটে। তাই এ থেকে বাঁচতে আজই ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।

প্রতিদিন ব্যায়াম করুন এবং যোগব্যায়াম করুন

পরিপাকতন্ত্রের উন্নতির জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম পাচনতন্ত্রের পাশাপাশি আমাদের শরীরের আরও অনেক উপায়ে উপকার করে। যদি আপনার পাচনতন্ত্র দুর্বল হয় তাহলে আপনি প্রতিদিন ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করলে আপনি উপকৃত বোধ করবেন।

শারীরিক পরিশ্রম করুন

বর্তমান সময়ে কেউ তাদের শরীর নিয়ে কাজ করতে চায় না। যে কারণে আজকের মানুষের পরিপাকতন্ত্র খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এমনও অনেকে আছেন যারা অফিসের কাজ করেন, যাদের বেশি প্রশংসা করার দরকার নেই। এ ধরনের মানুষ হাঁটা, দৌড়, সাইকেল চালানো, খেলাধুলা ইত্যাদি করতে পারেন।

পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য ঘরোয়া পরামর্শ

আপেল খান: আপেল খাওয়া পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। আপেল খেলে হজমের পাশাপাশি শরীরে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই তো একটা কথা আছে- “প্রতিদিন একটি করে আপেল খাও আর ডাক্তারকে তাড়িয়ে দাও”।

আদা এবং লেবু খান: যদি আপনার পরিপাকতন্ত্র খুব দুর্বল হয়, তবে আপনি আদার ছোট টুকরোতে লেবুর রস গার্গল করুন এবং এটি চুষে নিন, তাহলে এটি হজম সিস্টেমের জন্য খুব উপকারী হবে।

সালাদ খুব বেশি খান: সালাদ খাওয়া আসলে খুবই উপকারী। এবং লোকেরা এটি খেতে খুব পছন্দ করে, তাই শালাদ অবশ্যই কোনও ভোজে বা বিয়েতে তৈরি করা হয়। শালদ খেলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র একেবারে সুস্থ থাকে।

মৌরি পান করুন: মৌরি সেবন গ্যাসের সমস্যা প্রতিরোধ করে। আপনার যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে তবে আপনি প্রতিদিন এক চামচ মৌরি খান। মৌরি বুকের জ্বালা দূর করে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে।

কলা খান: কলা স্বাদে সুস্বাদু। কিন্তু এর উপকারিতাও তুলনাহীন। কলা আমাদের হজম শক্তি বাড়ায় এবং খাবার হজমেও সাহায্য করে।

পেঁপে খান: পাকস্থলীর অন্ত্র দুর্বল হওয়ার কারণে আমাদের শরীরে ভিটামিন জমে না, তাহলে পেঁপে খেলে বিটামিন সি পেতে পারেন। এতে প্যাপাইন থাকে যা প্রোটিনকে বিভক্ত করে। কাঁচা পেঁপে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। যা খাবারকে হজমযোগ্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।

এলাচ খান:এলাচ খাওয়া হজমের জন্য খুবই ভালো বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এলাচ খাওয়া খুবই উপকারী। এটি গর্ভবতী মহিলাদের হজমের সমস্ত সমস্যা দূর করে। চায়ের সাথেও খেতে পারেন।

আমলা ব্যবহার করুন: আমলা খেলে আমাদের শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব দূর হয়। এটি নিয়মিত সেবন করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রও নষ্ট হয় না। আমলা পিষে কালো মরিচ, হিং ও জিরার সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন।

পরিশেষে বলতে চাই, পেটের বা পরিপাকতন্ত্রের নানা রোগের চিকিৎসা, রোগপ্রতিরোধ, রোগবিস্তার এবং রোগনির্ণয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এই দিনটি পালন করা শুরু হয়েছিল। সারা পৃথিবী জুড়েই পরিপাক সংক্রান্ত নানা অসুখের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়।তাই সুস্থ-সবল পরিপাকতন্ত্রের জন্য চাই যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রতিরোধ।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।