নওগাঁ প্রতিনিধি : বিক্রি হবে ‘নওগাঁর পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’। তবে নওগাঁর পালোয়ান কোনো মানুষ নয়, সাদা পাহাড় নয় কোনো পাহাড়ের নাম। আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য লালন-পালন করা দুটি ষাঁড়ের নাম ‘নওগাঁর পালোয়ান’ ও ‘সাদা পাহাড়’। কালো ও সাদা রংয়ের সুঠাম স্বাস্থ্যের নওগাঁর পালোয়ানের ওজন ২০ মণ এবং ধপধপে সাদা রঙের  সাদা পাহাড়ের ওজন ২২ মণ। ষাঁড় দুটির মালিকের আশা, পালোয়ান ও সাদা পাহাড়কে বিক্রি করবেন ২০ লাখ  টাকায়। 

ফিজিয়ান জাতের গরু দুটি দেশীয় পদ্ধতিতে নিজের বাড়িতে মোটাতাজা করেছেন নওগাঁ সদর উপজেলার পার-বোয়ালিয়া চৌধুরীপাড়া গ্রামের শামীম হোসেন ও তিথী বেগম দম্পতি। শামীম পেশায় একজন ‘নরসুন্দর’। তিনি ঢাকার বনানী বাজার এলাকার একটি সেলুনে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী তিথী বেগম গৃহিণী। তিন বছর ধরে বাছুর অবস্থা থেকে গরু দুটিকে লালন-পালনের কাজ অনেকটা একা হাতে সামলিয়ে আসছেন তিথী বেগম। তঁদের লালন-পালন করা বিশাল আকৃতির ষাঁড় দুটি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছেন তাঁদের বাড়িতে।

শামীম হোসেন বলেন, ‘তাঁর শাশুড়ী ছয়-সাত বছর আগে তাঁদের সংসারে যাতে সচ্ছলতা আসে সে জন্য হলোস্টাইন ফিজিয়ান জাতের ৮০ হাজার টাকায় একটি গাভী গরু কিনে দেন। পরে একই জাতের ষাঁড়ের সিমন ব্যবহার করে চারবার কৃতিম প্রজননের মাধ্যমে চারটি বাছুর জন্ম দেয় গাভিটি। এক বছর আগে ছয় মাসের একটি বাছুর ও এক বছরের একটি বাছুরসহ গাভী গরুটি ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করি। সেই ৩ লাখ টাকা দিয়ে এই দুটি ষাঁড় লালন-পালনের খরচ চালাচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা এবার ঈদুল আজহায় ষাঁড় দুটি বিক্রি করার। অনেককেই দেখেছি, ২০ মণ, ২২ মণ ওজনের গরুর দাম ১৪ লাখ, ১৫ লাখ টাকা চেয়ে থাকে। কিন্তু বাজারে গিয়ে ওত দামে বিক্রি করতে পারে না। সেই বাস্তবতায় আমি ওত দাম রাখতে চাই না। গরু দুটি সাত লাখ কিংবা আট লাখ টাকা করে কেউ নিতে চাইলে বিক্রি করে দেব। মোটামুটি দুটি গরু মিলে ২০ লাখ টাকা আশা করছি। পালোয়ান ও সাদা পাহাড়কে হাটে নেয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই তাদের ছবি ও বর্ণনা অনলাইনে দিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই ষাঁড়গুলোকে তাঁরা দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করছেন। দিনে দিনে গরু দুটির ওজন ২০ মণ, ২২ মণে এসে দাঁড়ায়। বয়সে সাদা পাহাড় নামের ষাঁড়টি পালোয়ানের ছয় মাসের ছোট। বয়সে ছোট হলেও ধপধপে সাদা রঙের ষাঁড়টি হৃষ্টপুষ্ট ও লম্বা হয়েছে বেশি। ষাড় দুটিকে এক মাস আগে নওগাঁ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় চত্বরে প্রাণী সম্পদ মেলায় ওঠানো হয়েছিলো। সেখানে ডিজিটাল স্কেলে ষাঁড় দুটির ওজন মাপা হয় সাদা পাহাড়ের ওজন হয় ২২ মণ আর পালোয়ানের ওজন হয় ২০ মণ। এখন আরও এক-দুই মণ করে ওজন বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

কাজের কারণে স্বামী ঢাকায় থাকায় ষাঁড় দুটি লালন-পালনের পুরো কাজ প্রায় একা হাতে করে থাকেন শামীমের স্ত্রী তিথী বেগম। তিনি বলেন, ‘ছোটো বেলা থেকেই বাবার বাড়িত গরু দেখে আসোছি। বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর থেকে অভাব ল্যাগেই আছে। সংসারের অভাব দূর করার জন্য হামার মা একটা গাই (গাভি) কিনে দিছিলো। সেই গাভি গরু থেকে এই দুটা গরু হছে। গরু দুটাক হামি সন্তানের মতো মানুষ করিছি। নিজের সন্তানের মতো ওগোরে খাওয়াইছি। হামার শাশুড়ী ও দ্যাওরও (দেবর) গরুগুলা লালন-পালনে সাহায্য করে। এ্যাখন গরু দুটা ভালো দামে বিক্রি হলে সংসারের অভাব দূর হতো। দোয়া করোছি, গরু দুটা য্যান ভালো দামে বিক্রি হয়।’

পালোয়ান ও সাদা পাহাড়ের খাদ্য তালিকায় আছে- কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, ভুট্টা, ডালের গুঁড়া, তৈলবীজের খৈল, ছোলা ও খুদের ভাত। সব মিলে দিনে ২০-২৫ কেজি করে খাবার খায় পালোয়ান ও সাদা পাহাড়। শুরুর দিকে খাবার কম খেলেও দিনে দিনে তাদের খাবারের চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়।

এ ধরনের গরু লালন-পালন খুবই কষ্টকর বলে জানান শামীম হোসেন। তিনি বলেন, পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে গরু লালন-পালন করতে হয়। পরিবারের সবাই মিলে যতœ করে ষাঁড়টি বড় করা হয়েছে। পালোয়ান ও সাদা পাহাড়ের পেছনে তিন বছরে অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তাঁদের।

(বিএস/এসপি/জুন ১২, ২০২৩)