জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : ঘরে কিংবা বাইরে, বাসা কিংবা অফিস— সব জায়গায় এখন মশার উপদ্রব। বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, হাসপাতালগুলো ভরে গেছে ডেঙ্গু রোগীতে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন চট্টগ্রামের নগরবাসী। গতকাল দক্ষিণ খুলশীতে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১২ ভবন মালিককে ৯২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এডিসবাহিত এ মশার অত্যাচারে অতিষ্ট নগরবাসীকে বাঁচাতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এখনও চলছে চিরুনি অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা। ড্রোন উড়িয়ে মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করা। কিন্তু কোনোভাবেই কমছে না মশার উপদ্রব। অবস্থা এমন যেন সিটি কর্পোরেশনকে তোয়াক্কাই করছে না মশা!

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু ভয়ানক রূপ নিতে পারে। দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল ২০১৯ সালে। সবকিছুকে ছাপিয়ে আলোচনায় এখন মশার উপদ্রব আর ডেঙ্গু আতঙ্ক। ডেঙ্গুর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। ক্ষুদ্র মশার উৎপাতে রীতিমতো অসহায় নগরের বাসিন্দারা। কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা অ্যারোসল দিয়েও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনের বেলায়ও মশারি টানাতে হচ্ছে অনেককে।

সিটি কর্পোরেশনের দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে তারা। মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করেছে সিটি কর্পোরেশন। মশা মারতে খাল, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয় পরিষ্কার করা হয়েছে। এমন নানা উদ্যোগ নিয়েও সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারেনি। সম্প্রতি ঢাকঢোল পিটিয়ে মশক নিধন কর্মসূচি ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। উদ্বোধনের পর থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান নগরের বাসিন্দারা।

জামাল খানের বাসিন্দা রাজিব দাশ বলেন, দিন-রাত ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকি। আশপাশের সবার কাছ থেকে শুনছি, অনেকের ডেঙ্গু হচ্ছে। আমার বাড়িতেও ছোট বাচ্চা আছে। সে কারণে ভয়টা আরও বেশি। দিন-রাত সব সময় মশারি টানিয়ে রাখতে হচ্ছে। বাড়িতে পানি জমতে দিচ্ছি না কিন্তু বাইরে থেকে মশা এসে কামড়ালে এর দায় কে নেবে? সিটি কর্পোরেশন কী করে বুঝি না, তাদের মশা নিয়ন্ত্রণের খবর শুধু খবরে দেখি। কিন্তু বাস্তবজীবনে সুফল আমরা পাই না।

বিশেষজ্ঞ বলছেন, সিটি কর্পোরেশনকে মশার হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি প্রজননস্থল ধ্বংস করার কার্যক্রম নিতে হবে। এ মুহূর্তে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বছরে চেয়ে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে সিটি মেয়রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন।

একইভাবে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককেও (সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ) উদ্বেগের কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে করপোরেশন এলাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী দ্রুত বাড়ছে, যা গত বছরের তুলনায় আশঙ্কাজনক।

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিস্থিতি এমন থাকলে সামনে আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। এডিস মশা নিধন না করা হলে ডেঙ্গু আরও আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। তাই চসিককে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি। এর আগেও মেয়রসহ আরও কয়েকটি দপ্তরে আমরা বিষয়টি অবহিত করেছিলাম।

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চসিকের পক্ষে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা একদিনে ৬০ জনের পরীক্ষা করে মাত্র ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত পেয়েছি। সুতরাং আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভালো হয়।

চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ড্রোনের কারণে প্রতিটি বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে হচ্ছে না৷ খুব অল্প সময়েই অনেক বাড়ির ছাদে মশা জন্মানোর মতো পানি আছে কি না তা খুঁজে বের করা যাচ্ছে৷ এ সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে মশার আবাসস্থল নির্ধারণে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে।

(জেজে/এএস/জুলাই ১৩, ২০২৩)