আড়িয়াল খাঁ নদ
ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের দাবী স্থানীয়দের
বিশেষ প্রতিনিধি, মাদারীপুর : মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের পূর্ব মহিষেচর এলাকার আচমত আলী খান ব্রীজ সংলগ্ন আড়িয়াল খাঁ নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে এই এলাকার মানুষ আতংকের মধ্যে আছে। তারা একটি স্থায়ী বাধের দাবী জানিয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শুরু হবার পর থেকেই মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের পূর্ব মহিষেচর এলাকার আচমত আলী খান ব্রীজ সংলগ্ন আড়িয়াল খা নদে ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। আচমত আলী খান ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় এই ভাঙ্গণের ফলে এখানকার প্রায় ৬ শতাধিক মানুষ আতংকের মধ্যে আছে। এই ভাঙ্গণের ফলে এখানকার দক্ষিণ-পূর্ব মহিষেরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেপারীবাড়ি মসজিদসহ নানা স্থাপনা হুমকির মধ্যে আছে। গত বছর এখানে ১০০ ফিট বাধ ও কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গণ রক্ষা হলেও বর্তমানে তা পর্যাপ্ত নয়। প্রতিবছরের মতো এবছরও আবার ভাঙ্গণ দেখা দেয়ায় জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলা দরকার হয়ে পড়েছে। তাছাড়া প্রতিবছর ভাঙ্গণের ফলে এখানকার বসবাসকারীরা ভয় ও আতংকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তাই তাদের দাবী এখানে স্থায়ীভাবে বাধ নির্মাণ হলে তারা কিছুটা হলেও একটু শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন মাতুব্বর বলেন, আমি এখানকার বাসিন্দা। এখানে একটি মসজিদ আছে। এটি রক্ষা করা দরকার। ইতিমধ্যে এই মসজিদের ওজুখানা, টয়লেট নদী গর্ভে চলে গেছে। তাই এখানে একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা দরকার।
স্থানীয় শাহেরুর বিবি বলেন, আমরা এখানে স্থায়ী একটি বাধ চাই। নদীতে যদি আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যায়, তাহলে আমাদের থাকার জায়গাও থাকবে না।
স্থানীয় রাশিদা আক্তার বলেন, প্রতিবছর এখানে নদীতে ভাঙ্গণ হয়। তাই আমরা এখানে একটি স্থায়ী বাধ চাই। যাতে করে আমরা একটু চিন্তামুক্তভাবে বসবাস করতে পারি।
স্থানীয় আ. আজিজ বলেন, গত বছর এখানে ১০০ ফিটের বাধ করা হয়েছিলো। কিন্তু তা পর্যন্ত নয়, এই বাধের দুইপাশে স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় আবু কাশেম সরদার বলেন, এখানে যদি ভেঙ্গে যায়, তাহলে আমাদের থাকার কোন জায়গা থাকবেন না। তাই এখানে একটি স্থায়ী বাধ দরকার। স্থায়ী বাধ না হলে যে কোন সময় ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে যাবে এই পুরো এলাকা।
মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. শাহজালাল বলেন, এখানে আমি প্রায় ৫ বছর ধরে এসেছি। এখানকার মানুষ দিনমজুর। তাদের তেমন কোন জায়গা নেই। এই জায়গা ভেঙ্গে গেলে তাদের আর থাকার জায়গা থাকবে না। তাই এখানে স্থায়ী বাধ জরুরি দরকার।
স্থানীয় বাসিন্দা মালোশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ জয়নাল মোবাইল ফোনে বলেন, এখানে একটি মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। পাশাপাশি অনেকেই বহু কষ্ট করে ধার দেনা করে থাকার জন্য পাকাস্থাপনাও তৈরি করেছেন। এখানকার মানুষগুলো অনেক গরীব, অনেকেই দিন আনে দিন খায়। তাই এলাকাটি ভেঙ্গে গেলে, এখানকার মানুষের মাথা গোজার ঠাইটুকুও থাকবে না। প্রতিবছরই একটু একটু করে নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন একেবারেই সামনে চলে এসেছে। তাই এখানে যদি একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা না হয়, তাহলে এখানকার মানুষদের যে কোন সময় বড়ধরণের সমস্যায় পড়তে হবে। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণের দাবী জানাই।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসিরউদ্দিন মোল্যা টুকু বলেন, এই ভাঙ্গণের মুল কারণ হচ্ছে ড্রেজার মেশিন। অপরিকল্পীতভাবে নদী থেকে বালু তোলার কারণেই এই অবস্থা। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। তারপর কি ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেভাবেই কাজ করা হবে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা ভাঙ্গণের খবর পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তারপর জরুরী কোন বরাদ্দ আসলেই প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। যাতে করে ভাঙ্গণ রোধ করা যায়।
(এএসএ/এসপি/জুলাই ২২, ২০২৩)