চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : কয়েক মাস পরেই দ্বাদশ সংসদের জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে সাংগঠনিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে নির্বাচনের জন্য। চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও বইছে একই হাওয়া। এতদিন আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও এবার বিএনপি-জামায়াতও রাজনীতির মাঠে নামছে।

এরমধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে ইসলামী সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নেমে পড়েছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী মাঠে ততই প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম ১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনটি চট্টগ্রাম বিভাগের বহুল আলোচিত। কেননা ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজামকে হারিয়ে এমপি হন।

ওই নির্বাচনে বাবু ১ লাখ ১০ হাজার ৯৫১ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সরওয়ার জামাল পান ৮৬ হাজার ৭৫১ ভোট। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগে আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুর হলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বাবুর ছেলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। বর্তমান ভূমিমন্ত্রী।

তিনি জাতীয় পার্টির তপন চক্রবর্তীকে বড় ব্যবধানে হারান। ২০১৪ সালে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ভোটার অধ্যুষিত চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বিএনপি বিহীন ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আগামী নির্বাচনে তিনিই আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। মাঠের চিত্র বলছে চট্টগ্রাম ১৩ আসরন বিএনপিকে ঠেকাতে সাইফুজ্জামানের কোন বিকল্প নেই।

আনোয়ারায় বাবু পরিবারের বাইরে এমপি মনোনয়ন যাবে, এমনটি ভাবতে রাজি নন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ আসনেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল, কাফকো ও কেইপিজেড। গড়ে উঠছে চীনা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল। আনোয়ারার পারকী সমুদ্রসৈকতে গড়ে তোলা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। একে ঘিরে শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন টানেলের কাজ প্রায় শেষ। সেপ্টেম্বরে বদলে যাবে আনোয়ারা। আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ থিম সামনে রেখে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি থেকে আনোয়ারার সিইউএফএল এলাকা বরাবর নির্মাণাধীন এ টানেলই নয় আরও অনেক কারণে আসনটি গুরুত্বপূর্ণ।

অতীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে রয়েছে প্রার্থীজট। বিএনপির সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম ছাড়াও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী আব্বাস, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের নাম আলোচনায় আছে। তবে সরওয়ার জামাল ১৩ বছর ধরে এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। চট্টগ্রামে বিএনপির কোনো কার্যক্রমে নেই তার উপস্থিতি।

এ অবস্থায় বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাবেন, তা বলা মুশকিল। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের আনোয়ারা উপজেলা কমিটির সভাপতি আবদুর রব চৌধুরী টিপু, দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিয়া চৌধুরী, কর্ণফুলী উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এম বোরহান উদ্দিন ফারুকী, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক মো. হারুনুর রশীদ। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের প্রধান শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা এমএ মতিন মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও নৌকার হয়ে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে এমপি হন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, জুন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এমপি হন বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম। এ আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন। তবে আসনটি ধরে রাখতে এবং বিএনপির শক্তিশালী যে কোন প্রার্থীকে ঠেকাতে বর্তমান ভূমিমন্ত্রীর কোন বিকল্প নেই বলে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান।

(জেজে/এএস/জুলাই ২৩, ২০২৩)