কেন্দুয়া প্রতিনিধি : আশুজিয়া বাজারে মসজিদের অদূরে রাতভর বাণিজ্যিকভাবে অশ্লীল নৃত্য গীতের প্রতিবাদ করায় আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের লোকদের হাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীন সদস্য আব্দুল লতিফ লাঞ্ছিত হয়েছেন। এসময় আব্দুল লতিফকে বাঁচাতে গিয়ে বেধড়ক হামলার শিকার হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। সিরাজুল ইসলাম গুরুতরে আহত হয়ে নেত্রকোনা অধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকালে আশুজিয়া জয়নাথ করোনেশন ইনস্টিটিউশনের গেটের উল্টো দিকে দোকানে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। চলছে পুলিশি টহল। যেকোনো সময় বড় ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামা বেধে যেতে পারে।

জানা যায়, গত তিন চার সপ্তাহ ধরে আশুজিয়া বাজারের মসজিদের অদূরে একটি পতিত জায়গায় রাত ১০ টা থেকে কথিত নারী শিল্পীদের নিয়ে চলে অশ্লীল নৃত্য গীত। এর আয়োজন করেন আশুজিয়া গ্রামের একদিল সাইকুল, রুবেল, মিলন ও ইউপি সদস্য আলামিন। আশুজিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ ভুট্টুসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান গত তিন শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত চলে অশ্লীল নৃত্য গীত। ছয়-সাতজন নারী শিল্পী অশালীন পোশাক পরে উত্তেজনামূলক নৃত্ত গীত পরিবেশন করে। এতে উঠতি বয়সের যুবকেরা নৃত্য গীতের সময় মঞ্চে উঠে শিল্পীদের বিভিন্ন অঙ্গে টাকা ছুঁড়ে দিতে থাকে।

এ নিয়ে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকজন অশ্লীল নৃত্য গীত বন্ধ রাখার দাবি জানায়। আয়োজনকারীরা গ্রামবাসিকে এ অনুষ্ঠান আর করবেনা বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল লতিফ ও তার ভাই মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস ছালাম মাস্টার জানান অশ্লীল গান বাজনা বন্ধ রাখার কথা থাকলেও ০৪ আগস্ট শুক্রবার রাতে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে রনির মাধ্যমে হঠাৎ করে আবার গান বাজনার আয়োজন করা হয়। এতে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে গান বাজনার মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলে। খবর পেয়ে রাত এগরটা দিকে ঘটনা স্থলে ছুটে যান আশুজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মঞ্জুর আলী। তিনি মঞ্জ ভাঙছুরকারীদের শাসালে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল লতিফের ছেলে মুরসালিন ও তার সহযোগিরা ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলীকে তিরষ্কার করে অপমান জনক কথা বলে। এরই প্রেক্ষিতে পরদিন শনিবার বিকেলে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল লতিফ আশুজিয়া বিদ্যায়ল প্রাঙ্গণে সিরাজুল ইসলামের দোকানে গেলে চেয়ারম্যানের আট-দশজন লোক আব্দুল লতিফকে লাঞ্ছিত করে।

আব্দুল লতিফের অভিযোগ চেয়ারম্যানের ছেলে রনির ও তার লোকেরা এসে তাঁকে আটকিয়ে লাঞ্ছিত করতে থাকে। এসময় আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বেধড়ক হামলার শিকার হন ব্যবসায়িক সিরাজুল ইসলাম। ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে রনি বলেন গানের আয়োজক আশুজিয়ার লোকজন। আমি এর সাথে কোনোভাবেই জড়িত না। ঝামেলার কথা শোনে সেদিন গিয়েছিলাম। আশুজিয়ার লোকেরা মঞ্চ ভাঙ্গার পর বাবাকে ফোন করে সেখানে নিয়ে অপমান করেছে। তাতে বাবার অনুসারি কিছু লোক ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন আব্দুল লতিফকে সিরাজের দোকানে বাবাকে অপমানের কথা জিজ্ঞাবাদ করছিল। আমি গিয়ে পরিস্থিতি সামলে দিয়েছি।

ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: মঞ্জুর আলীর ভাষ্য, আমার কিছু লোকজন অপমান সইতে না পেরে আব্দুল লতিফকে কিল-ঘুষি মেরেছে এবং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় দোকানদার সিরাজকে মারপিট করছে। তিনি বলেন আব্দুল লতিফ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের লোক। তারাই পরিকল্পনা করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আবু তাহের বলেন মঞ্জুর আলী, ছেলে রনি ও তার লোকদের অত্যাচারে সারা ইউনিয়নের মানুষ অতিষ্ঠ। আমরা এসবের বিচার চাই।

(এসবি/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২৩)