নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর নিয়ামতপুরে অন্যের ভোগদখলীয় ৪৮বিঘা জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়া আদালতের ১৪৪ ধারা নির্দেশ অমান্য করে বাধা প্রদানসহ ফসল নষ্ট করারও অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষরা সিএস প্রজার অজুহাতে জমিগুলো দখলের পাঁয়তারা করছে বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চাপড়া চন্দননগর এলাকায়। এ ঘটনায় একাধিক ভূক্তভোগী আদালতে ও থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তারপরও প্রতিপক্ষরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাঁধা প্রদানসহ হুমকি অব্যাহত রেখেছে। অভিযোগ আছে, তারা বর্গাচাষি থেকে ভূলক্রমে রেকর্ডমূলে হয়েছেন জমির মালিক। তাই একই মৌজার জমি হওয়ায় অন্যান্য জমিগুলোও দখল করতে চায় তারা।

জানা গেছে, প্রায় শত বছর আগে ১৯২১ সালে হাজী আছির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নওগাঁ মুনসেফ কোর্ট থেকে নিয়ামতপুরের চন্দননগর মৌজায় ২৫ একর জমি নিলামে পান। যেটা দুটি বায়নানামা দলিলমূলে দখলি স্বত্ত্ব পান। এরপর নিলামকারী আছির উদ্দিনের কাছ থেকে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ২৭ বিঘা জমি বর্গা নেন। এক সময় তাদের নামে ভুলক্রমে ২৭ বিঘা জমি ৬২ ও ৭২ রেকর্ডভূক্ত হয়। অবশিষ্ট ৪৮ বিঘা জমির মূলনিলামকারীর ওয়ারিশদের নামে ৬২ ও ৭২ রেকর্ডভূক্ত হয়। পরবর্তীতে প্রকৃত ওয়ারিশদের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে সাদেকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফজলুল হকসহ আরো অনেকে জমিগুলো কাগজমূলে ক্রয় করেন। এরপর দীর্ঘ ৪০বছর ধরে তারা শান্তিপ্রিয়ভাবে জমিগুলো ভোগদখল করে আসছেন এবং স্ব-স্ব নামে নামজারি হয়েছে। এছাড়া তারা বর্তমান সাল পর্যন্ত খাজনা দিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে দুলাল, আয়েন উদ্দিন ও শাহজামালসহ ১৫/২০জন ব্যক্তি ওই জমিগুলো দখলের পাঁয়তারা করছে এবং ভয়ভীতিসহ হুমকি দিচ্ছে। সিএস প্রজার অজুহাতে তারা জমিগুলো পূর্বের ন্যায় দখল নিতে চায়।

এনিয়ে একাধিক ভূক্তভোগী নওগাঁ কোর্টে আয়েন উদ্দিন, দুলাল, ইয়াদ আলী, একরাম বাদশা, শাহাজামাল, আতাউর রহমানসহ অনেকের বিরুদ্ধে ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করলে আদালত থানার ওসিকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেন। কোর্টের নির্দেশে থানা তাদেরকে নোটিশ দিলেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না। সবকিছু উপেক্ষা করে তারা জমিতে কাউকে নামতে দিচ্ছে না। এর আগে ভূক্তভোগীদের পক্ষে সাদেকুল থানায় মামলা করলে পুলিশ এলাকায় শান্তি নষ্ট করার মূলহোতা দুলালসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালত থেকে জামিনে এসে পুনরায় তারা ভয়ভীতি ও জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। ফলে এখনও কিছু কিছু জমি ফাঁকা ও চাষবীহিন রয়েছে। এর মধ্যে কোর্টের তিনজন আইনজীবির সমন্বয়ে একটি মতামত প্রদান করা হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় উক্ত ২৭ বিঘা জমির বাহিরে তারা কোনো জমি পাবে না। তারপরও চক্রান্ত করেই চলেছে তারা। ফলে তাদের ক্ষমতার দাপট নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ভূক্তভোগী আব্দুল বারি জানান, আমাদের নামে যদি জমিগুলোর রেকর্ড না থাকতো তাহলে আমার মা আমেনা এবং স্থানীয় সুলতান মাহমুদ ও আব্দুল লতিফ চন্দননগর কলেজের মাঠে প্রায় আড়াই বিঘা সম্পত্তি দান করতে পারতেন না। আমরা আইনগতভাবে আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় অভিযোগ করেছি। আদালত জমিগুলোতে স্থিতিবস্থা জারি করে সকলেই যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় ভোগদখল করার জন্য আদেশ দেন। কিন্তু তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক জমি দখলের পাঁয়তারা করছে এবং প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে।

গত ৫ আগষ্ট ভূক্তভোগীদের পক্ষে দিনমজুরের কাজ করতে গিয়েছিলেন শহিদুল, সাব্বির ও মামুনসহ কয়েকজন। তীর ধনুকসহ বিভিন্ন অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হুমকি দিয়ে কাজ করতে বাধা প্রদান করে। এমনটিই জানালেন দিনমজুর শহিদুল। অভিযুক্ত আয়েন উদ্দিন বলেন, আমাদের পুর্ব পুরুষের সিএস খতিয়ানমূলে জমিগুলো। আদালত থেকে আমরা সব জমির রায় পেয়েছি। তাদের জমির কোন কাগজপত্র নাই।

(বিএস/এসপি/আগস্ট ০৯, ২০২৩)