কেন্দুয়া প্রতিনিধি : চুরির অপবাদ দিয়ে গ্রাম্য শালিশিতে আবু লায়েছ নামের ১২ বছরের এক কিশোরকে শারীরিকভাবে নিযাতনের পর ইউ.পি মেম্বার ও শালিসের সভাপতি সবুজ মিয়ার নির্দেশে মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। আবু লায়েছ কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামে বাক প্রতিবন্ধী আব্দুস সালামের ছেলে। ৮ আগস্ট সোমবার রাতে সরাপাড়া বাজারে অবিশ্বাসের ঘরে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নির্যাতনের পর তার মাথা ন্যাড়া করার পর মানুসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। অসুস্থ অবস্থায় শুক্রবার দুপুরের দিকে তাকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। তার বুকে, পিঠে, গলায় নীলাফুলা জখম রয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ নাম্বার বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় আবু লায়েছকে।

কি হয়েছিল ঘটনা জানতে চাইলে আবু লায়েছ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে, আমি কোন চুরি করি নাই। এরপরেই আমাকে চুরির অপবাদ দিয়ে সরাপাড়া বাজারে অবিশ্বাস মিয়া, আবু তাহের আমার হাত বেধে অনেক মারপিট করেছে। মারপিট করার পর মঙ্গলবার সকালে ধান ব্যবসায়ী কামাল মিয়ার দোকানে আমাকে মারপিট করে এবং সবুজ মেম্বারের নির্দেশে আমার মাথা ছিলানো (ন্যাড়া) করা হয়। এরপর আমার মায়ের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করলে আমার মা অনেক কষ্ট করে ২ হাজার টাকা দেওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি এখন খুব অসুস্থ্য। আমার বুকে, পিঠে, গলায় ও উড়–তে অনেক আঘাত ও বিষ বেদনা আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল ও ওসি মোঃ আলী হোসেন ও পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা। এলাকাবাসী বাজারে এলাকাবাসীকে জিজ্ঞাসা করার পর সন্দেহে সবুজ মেম্বার ও আবু তাহেরকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

শুক্রবার বিকালে সরাপাড়া বাজারে গেলে সরাপাড়া গ্রামের খোকন মিয়া, আল আমিন সহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানান, গত ১ মাসে হিরামন, লাইসুদ্দিন, আল আমিন অবিশ্বাস শাহীন মিয়ার দোকানে চুরি হয়েছে। এই চুরির ঘটনার অভিযোগে আবু লায়েছকে সোমবার রাতে ধরেছে তার চাচা অবিশ্বাস। পরে থাকে তার ঘরেই হাত বেধে মারপিট করা হয়। পরদিন সকালে মঙ্গলবার ধান ব্যবসায়ী কামাল মিয়ার দোকানে শালিস বসে। ওই শালিসে সভাপতিত্ব করে ৩নং ওয়ার্ড সবুজ মিয়া। শালিসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চুরির অপরাদে আবু লায়েছকে ব্যথ আঘাত করা হবে এবং মাথা ন্যাড়া করার পর ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হবে। ইউ.পি মেম্বার সবুজ মিয়া গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আমি মাথা ন্যাড়া করতে নিষেধ দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকজন অতি উৎসাহী হয়ে এ কাজটি করে ফেলেছে।

আবু লায়েছের মা নূরেছা বেগম জানান, আমার স্বামী বাক প্রতিবন্ধী। চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে মারপিট করেছে। মাথা কামিয়েছে এবং আমার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা জরিমানা নিয়েছে। এই ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ যাতে না দেই সেইজন্য আমাকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন মাতাব্বররা। আমি আইনের সহায়তা চাই, আমার ছেলের নির্যাতনের বিচার চাই।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক তদন্ত মোঃ আশরাফুল ইসলামের ভাষ্য আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউ.পি মেম্বার সবুজ মিয়া ও আবু তাহেরকে থানায় নিয়ে এসেছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালালের সাথে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমরা সরাপাড়া গিয়েছিলাম, সেখানে ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাইনি, শুনেছি কেন্দুয়ায় গিয়াছে। সবুজ মেম্বার ও আবু তাহেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। ইউ.পি চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(এসবি/এসপি/আগস্ট ১২, ২০২৩)