শেখ ইমন, শৈলকুপা : গেদু, সবদুল, তুফানে, ইরফানে, সাহেব আলী মেম্বর, ফিরোজ ভাই। এগুলো আলাদা আলাদা কোন ব্যক্তির নাম নয়! একজনেরই এত নাম। তবে সেটা অভিনয়তে। তবে আসল নাম কাবির ফয়সাল। বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দোগাছী গ্রামে। পড়ালেখার পাশাপাশি করছেন কনটেন্ট ক্রিয়েট। রয়েছে ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ। তা থেকে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে নিজে চলছেন,চালাচ্ছেন তার টিমে কাজ করা আরো কয়েকজন যুবককে। তাদের তৈরি ভিডিও দেখে রোজ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন তাদের সাথে দেখা করতে।

শুরুটা মঞ্চনাটক, গান-বাজনা দিয়ে। তবে করোনা মহামারীতে বন্দিজীবনে কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে তার মনে। সেই ইচ্ছা থেকেই খুলে ফেলেন ‘আজাইরা পাবলিক’নামে ইউটিউব চ্যানেল। শুরু করেন ঝিনাইদহের আঞ্চলিক ভাষায় কন্টেন্ট নির্মাণ। সাথে যুক্ত করেন আরো প্রায় ১০ জনকে। কেউ তার সাথে অভিনয় করেন,কেউ করেন ভিডিও এডিটিং আবার কেউ ক্যামেরার পেছনে কাজ করেন। এভাবেই শুরু হয় তার স্বপ্নের যাত্রা। নানা হাস্যরসাত্বক কন্টেন্ট বানানোর ২৮ দিনের মাথায় আয় শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে আরো কয়েকটি মাধ্যম থেকে টাকা আয় করেন তারা। বর্তমানে ‘আজাইরা পাবলিক’ ইউটিউব ও পেজ থেকেই মাসে আয় করেন লক্ষ লক্ষ টাকা। যা তার টিমে কাজ করা প্রত্যেকের ভাগ করে দেওয়া হয়।

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাবির ফয়সাল জানান, ২০১৭ সালে জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৯ সালে ঝিনাইদহ কেসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ও কলেজেই অনার্স ২য় বর্ষে পড়ালেখা করছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি করছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েট। আর তা দেখছেন ঝিনাইদহ সহ সারা দেশের মানুষ। ভিডিও শেষে নানারকম মন্তব্য করছেন তারা। বর্তমানে তার সাথে মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন ৬জন। ভিডিও ধারণ,এডিটিংয়ে রয়েছে আরো ৩ জন।

‘আজাইরা পাবলিক’র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন জনি ইসলাম,তিনি একইসাথে অভিনেতা, পরিচালক, গল্প লেখক। চাকরীর পাশাপাশি ছুটির দিনে সময় দেন ভিডিও নির্মাণে।

কথা হয় আজাইরা পাবলিকে অভিনয় করা অনিকেত অনিকের সাথে। তবে এই নামে তাকে অনেক কম লোকই চেনে। তার পরিচিত নাম ‘কুরবান চা’। তিনি জানান, পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছেন কিছুদিন। এখন পুরোটা সময়ই ব্যায় করছেন ভিডিও তৈরিতে। মাস শেষে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে নিজে চলছেন,পরিবারকেউ সাহায্য করতে পারছেন।

আরেক অভিনেতা স্মার্ট স্বাধীন বলেন, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই যান মাঠে। এরপর বেলা ১০টার দিকে মাঠের কাজ শেষ করে বাইসাইকেল নিয়ে ছোটেন নারকেলবাড়িয়া এলাকা থেকে ৪ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত দোগাছী গ্রামে। তারপর সারাদিন স্যুটিং শেষে রাতে ফেরেন বাড়িতে। এভাবেই চলে যাচ্ছে তার জীবন।

জীবন মাহমুদ,তিনিও এই টিমের জনপ্রিয় চরিত্র, তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি সময় দেন ভিডিও নির্মাণে। অল্পদিনেই ভাল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো ভাল কিছু করবেন বলে আশা করছেন।

‘আজাইরা পাবলিক’ চ্যানেল ও পেজের কর্ণধর কাবির ফয়সাল বলেন, তাদের বিস্তৃত পরিকল্পনা। টাকা রোজগার করে শুধু নিজেদেরই না, সমাজের গবীর-অসহায়দের পাশেও দাঁড়াবেন । যার জন্য একটি ফান্ড তৈরির কাজ চলছে। আশা করছেন তাদের এই চেষ্টা হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।

(এসআই/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২৩)