স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যমজ সন্তানের মা হয়েছে পাগলিটা, বাবা হয়নি কেউ! সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া যমজ ভাই বোনের নির্বাক চাহনি যেন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে আমাদের সমাজের নিকৃষ্ট চিন্তার মানুষদের, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে। হয়ত তাদের নির্বাক চাহনিই বলে যাচ্ছে কি দোষ ছিলো আমাদের? আমার মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের? কেন আমাদের পিতার পরিচয় ছাড়া জন্ম নিতে হলো? হাজারও প্রশ্নের উত্তর যেন অজানা সবার। গেল রবিবার সকালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইনিয়নের শ্রীপুর নতুন গ্রামে জন্ম নেয় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীর যমজ শিশু। এই গ্রামের জামানের বাড়িতে অজ্ঞাত ওই নারীর নরমাল ডেলিভারি হয়। পরে মা ও শিশুদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তাদের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে।  যে কারণে সেখান থেকে রেফার্ড করিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মা ও শিশু দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবিকারা জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ের প্রসূতিকে ভর্তি করা হয়েছে। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মা ও শিশু দুটি ভাল আছে। শংকা কেটে গেছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালে প্রসূতি ও যমজ শিশুর পাশে থাকা যশোর জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, রোববার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন এক প্রসূতি নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার যজম ছেলে-মেয়ের জন্ম হয়েছে। কিন্তু তার পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাকে দেখার মত কোন স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান মহোদয়ের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছি। আমরা মা ও শিশু দুটির দেখাশোনা করছি। মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসার পর সেটি বন্ধ হয়েছে। শিশু দুটির পরিচর্যার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করছি এনজিও, প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এডাব যশোরের সহ-সভাপতি শাহজাহান নান্নু বলেন, বাঘারপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই নারী ও তার দুই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় মা ও শিশুদের চিকিৎসা ও দেখভাল করার জন্য আমরা কাজ করছি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে মা ও শিশু দুটিকে দেখতে এসেছি। জরুরী ভিত্তিতে তাদের জন্য নতুন কাপড়সহ কিছু উপহার সামগ্রী এনেছি।

(এসএমএ/এএস/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩)