আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধারণের লক্ষ্যে একাত্তরের গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর ভিজিটের ফিল্ড ডায়েরী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) প্রদর্শন করা হয়েছে। সোমবার বেলা এগারোটা থেকে দিনভর শিক্ষার্থীদের ফিল্ড ডায়েরীগুলো একত্রিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে প্রদর্শন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সোশিয়লজি অফ ওয়ার এন্ড জেনোসাইড কোর্সের শিক্ষক দিলআফরোজ খানমের উদ্যোগে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে একাত্তরের চেতনা জাগ্রত করার অংশ হিসেবে খুলনায় অবস্থিত ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর ফিল্ড ভিজিট করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা ফিল্ড ভিজিট করেন। ওইসময় শিক্ষার্থীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালীদের ওপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকাররা যে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিলো তার অসংখ্য নমুনা এবং আলোকচিত্র দেখে শিক্ষার্থীরা শিউরে ওঠেন। সে সময়ে কতোটা মর্মান্তিকভাবে নারীদের ওপর সহিংসতা হয়েছিল তার অনেক প্রমান শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ করে। এছাড়াও জাদুঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করা কাপড়, চশমা, হাতঘড়িসহ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্মারক বিশেষ করে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনে ব্যবহৃত মাইকটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও রাজাকারদের ব্যবহার করা মোটরসাইকেল, টর্সচার সেলের নমুনা, মুক্তিযোদ্ধাদের পুড়িয়ে মারার জন্য ব্যবহৃত বয়লারের নমুনাও শিক্ষার্থীরা দেখেছে জাদুঘরে।

দিলআফরোজ খানম বলেন, ফিল্ড ট্রিপ শেষে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে ফিল্ড ডায়েরী লিখতে দেয়া হয়। সেই ফিল্ড ভিজিট এবং ফিল্ড ডায়েরী প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এরমাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা যদি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিজের মধ্যে ধারণ করে সেটাই হবে আমার এই আয়োজনের স্বার্থকতা। তিনি আরও বলেন, সোশিয়লজি অফ ওয়ার এন্ড জেনোসাইড কোর্সের অধীনে খুব শীঘ্রই মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক দিনব্যাপী ফিল্ম শোর আয়োজন করা হবে।

ফিল্ড ভিজিট করা শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, পাঠ্য বইয়ে অসংখ্যবার ১৯৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এসব বিষয়ে এবারই ফিল্ড ভিজিটের মাধ্যমে প্রাকটিক্যাল অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ জাদুঘর খুলনাতে প্রবেশ করেই একটি ছবিতে দেখি কাক ঠুকরে ঠুকরে ছিঁড়ে খাচ্ছে শিশুর পঁচা গলা নিথর মরদেহ। মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়েছিলাম। মনের মধ্যে ভাবছিলাম, সেইদিন নিস্পাপ শিশুটিও পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এমন মৃত্যু কি আসলেই ওই অবুঝ শিশুর প্রাপ্য ছিলো। এখানে ওই শিশুর জায়গায়তো আমি কিংবা আমার কোন নিকট স্বজনও থাকতে পারতো।

(টিবি/এএস/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩)