উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময়ের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ১২ অক্টোবর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সে সুবাদে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে জেল- জরিমানার শিকার হতে হবে। চাঁদপুর জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৫ জন। এছাড়া অনিবন্ধিত অনেক জেলে রয়েছে।

এবার ইলিশ আহরণের মৌসুম প্রায় শেষ। কিন্তু ভরা মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও চাঁদপুরের জেলেরা নদ নদীতে তেমন ইলিশের দেখা পায়নি।ইলিশের নাগাল না পেয়ে এখানকার জেলেরা হতাশ।

মৎস্যবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম ছাড়ে। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মেঘনা নদীতে ছুটে আসে।

ইলিশের ডিম পরিপক্কতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মা ইলিশ রক্ষায় এ বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জেলেদের সাথে সচেতনতামূলক একাধিক সভা সেমিনারসহ জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সাথে সভা করেছে মৎস্য বিভাগ। এবার নির্দিষ্ট সময়ে জেলেদের ২০ কেজির পরিবর্তে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। এ জন্য তারা আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সহায়তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন।২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল করতে জেলা প্রশাসকের টাস্কফোর্স উপজেলা প্রশাসনসহ সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করবে।'
এ বিষয়ে জেলা টাক্সফোর্স কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিলে জেলেরাই লাভবান হবে। তবুও যদি কোনো জেলে নদীতে নামার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় অভয়াশ্রমের জেলাগুলো হলো: বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুর। এ ছাড়াও ৩১ জেলার ১৫৫ উপজেলার অংশ বিশেষ এই নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। চাঁদপুর থেকে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার ১০০ কিলোমিটার, ভোলার চর পিয়াল থেকে মেঘনার শাহবাজপুর পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর চর রুস্তম ও তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরে নরিয়া ও চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় মেঘনার ২০ কিলোমিটার ও বরিশালের হিজলা মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা, কালাবদর ও গজারিয়া নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকা এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ সময় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য খাদ্যসহায়তা বাবদ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি জেলে পরিবার চাল পাবে ২৫ কেজি করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের মানবিক খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৭ জেলার ১৫১টি উপজেলায় এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

(ইউএইচ/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০২৩)