মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মেয়ের জামাইয়ের বিরুদ্ধে একগাঁধা অভিযোগ তোলে শাশুড়ির ভিডিও ভাইরাল নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যখ্যা করতে স্ত্রীকে নিয়ে গত ২ অক্টোবর মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও  মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. জাকারিয়া। যা নিয়ে রীতিমতো টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়। তবুও বিতর্ক যেনো পিছু ছাড়ছেনা সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে।

এবার মেয়ের জামাই জাকারিয়ার বিরূদ্ধে কূট-কৌশল করে শাশুড়ির ভূ-সম্পত্তি আত্মসাৎ, নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শনের প্রতিবাদে প্রতিকার চেয়ে শ্বাশুড়ি রাজিয়া হক ছেলে ও স্বজনদের নিয়ে মানববন্ধন করেছেন।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রেজা উল হক, রেশমা আক্তার, সাইফুল ইসলাম, তাহমিনা, ফাতেমা আক্তার, মুক্তা, বদরুল ইসলামসহ পরিবারের প্রায় পনেরো-বিশজন আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন ওই মানববন্ধনে।

মানববন্ধনে রাজিয়া হক বলেন, ‘আমার অসুস্থতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই মো. জাকারিয়া আমার সম্পত্তি দখলের লোভে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। প্রথমে আমার একমাত্র ছেলেকে আমার নিকট নেশাখোর, জুয়াড়ি ও সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণে লিপ্ত হয়। আমিও সরল মনে তাদের কথা ও ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে আমার ছেলেকে ভুল বুঝি। ও তার সাথে খারাপ আচরণ করে তাকে বাসা থেকে বের করে দেই। আমার ছেলের অনুপস্থিতিতে আমার শরীর আরো খারাপ হতে থাকলে ও পরবর্তীতে আমার খাবার/পানীয় দ্রব্যের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে উপরোক্ত ঠিকানায় আমার নিজ নামীয় ১২ দশমিক ৩৫ শতক ভূমির শূন্য দশমিক ৫ শতক ব্যতিত বাকি পুরো সম্পত্তি আমার মেয়ে আমার কাছ থেকে হেবা দলিল করে নেয়, যা আমি পরবর্তীকালে জানতে পারি। উক্ত হেবা ঘোষণাকালে আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই ও তাদের ষড়যন্ত্রে সহায়তাকারী ছাড়া আমার অন্যকোনো আত্মীয়, প্রতিবেশী, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এমন কি আমার বড় মেয়ে ও একমাত্র ছেলে মো. রেজা উল হক উপস্থিত ছিল না। যা হেবা ঘোষণার পরিপন্থী।’

‘মানবেতর জীবনযাপন’ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হলে এতে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার মেয়ে উম্মে সালমা হক ও মেয়ের জামাই জাকারিয়া। তারা আমাকে মারধর করে, হুমকি-ধামকি প্রদানসহ আমার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনি আমি খেতে বসলে আমার মেয়ে আমার হাত থেকে খাবার প্লেট কেড়ে নিয়ে আমাকে ধাওয়া দেয়। বর্তমানে আমি নিজ গৃহ থেকে আমার ছেলে ও প্রতিবেশীর বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি ছলনার আশ্রয় নিয়ে আমার কাছে থেকে কেড়ে নেয়া সম্পত্তিটা আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

’রাজিয়া হকের ছেলে রেজাউল হক মানববন্ধনে বলেন, ‘আমার মা রাজিয়া হক একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। আওয়ামী পরিবারের মেয়ে। আমার মায়ের সাথে যে অন্যায় আচরণ জাকারিয়া করেছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মায়ের এই সম্পত্তিটা ছিল আমার নানীর অর্থাৎ আমার মায়ের মার। উনার সম্পত্তি উনি উনার মেয়েকে অর্থাৎ আমার মাকে দিয়েছেন। নানী মারা যাওয়ার পর আমার মা এই সম্পত্তির মালিক হন। মা এই সম্পত্তি আমরা এক ভাই এক বোনের কারো মধ্যে ভাগভাটোয়ারা করে দেন নাই। ছলনা করে জোরপূর্বকভাবে সে (জাকারিয়া) উনার কাছ থেকে এই সম্পত্তিটা ছিনিয়ে নেয়। এখন সে দাবি করছে সে সম্পত্তিটা আমার কাছ থেকে কিনেছে এবং তার বৌয়ের অংশ সে পেয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো আমার মা জীবিত থাকা অবস্থায় সম্পত্তি ভাগ হলো কখন?’

শাশুড়ির মানববন্ধনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মৌলভীবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. জাকারিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এই মানববন্ধন করা হয়েছে।

(একে/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০২৩)