স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : বাঙ্গালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে মৃৎশিল্পীর দিকে ঝুকছেন সচেতনমহল। এবারের দুর্গা পূজায় মাটির তৈরি খেলনায় আগ্রহ বেড়েছে। বাঙ্গালির আবহমান কালের ঐতিহ্য ধারণ করে চলেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র। প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন রকম মাটির তৈরি জিনিসে শিল্পীর হাতের নিখুঁদ ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে মৃৎশিল্প। সময়ের আবর্তে শুধু প্রয়োজন মেটানোই নয়, মাটির তৈরি জিনিসে আনা হয়ে নান্দনিকতা। যা মানুষকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। যশোর শহরের পূজা মন্ডপগুলোতে বসেছে এই সব মৃৎশিল্পের পসরা। একদিকে বেড়েছে ক্রেতাদের বাড়তি আগ্রহ অন্যদিকে বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন কেনা বেচায়।

যশোর শহরের পূজা মন্ডপগুলোতে বসেছে মাটির তৈরি জিনিস পত্রের দোকান। এসব দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও থরে থরে সাজানো রয়েছে মাটির তৈরি পুতুল, ঘোড়া, আম, হাড়ি,পাতিল, পাখি, নৌকাসহ বিভিন্ন ধরণের খেলনা। মাটির তৈরি এসব খেলনায় দেওয়া হয়েছে নানান রং এর নানান সাজ। হরেক রকমের এই সব খেলনার দোকানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ক্রেতা। কেউ বা তার সন্তানকে হাত ধরে মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করাচ্ছেন। শখের বসে কিনে দিচ্ছে পাখি, পুতুল, ঘোড়া। আবার কেউ বা সন্তানের বাহানা মেটাচ্ছেন স্বল্পমূল্যে এই সব খেলনা ক্রয় করে। বিক্রেতারা স্বল্পলাভে বেশি সংখ্যক খেলনা বিক্রয়র চিন্তা করছেন। তবে বাজারের প্লাস্টিকের খেলনার অধিক্য বেশি থাকায় কিছুতা হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে। তবুও বিক্রেতাদের আশা এবারের দুর্গাপূজায় ব্যবসা ভালো হবে।

শহরের আশ্রম রোডে মাটির তৈরি খেলনা বিক্রিতে দোকান সাজিয়ে বসা আব্দুল খালেক বলেন, 'তিনি প্রায় ৩০ বছর তিনি এই মৃৎশিল্প বিক্রির সাথে জড়িত। আগের তুলনায় মাটির জিনিসের চাহিদা কম। অধিকাংশ মানুষের প্লাস্টিকের খেলনার দিকে আগ্রহ বেশি। বিভিন্ন উৎসবে মাটির খেলনার চাহিদা বাড়ে। এবারের দুর্গাপূজায় ব্যবসা খুব বেশি ভালো না হলেও খারাপ হবে না। শহরের বাইরে থেকে পাইকারি দামে কিনে এনে ২/৪ টাকা লাভে এসব জিনিস বিক্রি করছেন তারা।'

এদিকে প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা পবিবশ দূষণ করে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক খেলনা সহজে নষ্ট হয় না। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচতনতার বার্তা দিতেই সচেতনমহলকে এগিয়ে আসতে হবে মাটির তৈরি জিনিসপত্র, খেলনা ব্যবহার করতে। বাঙ্গালির হাজার বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হলে মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত মানুষের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ প্রদানকরা সহ উৎসাহিত করতে হবে। একমাত্র সচেতনতায় পারে মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে।

রায়পাড়ার মরিয়ম খাতুন নামের এক শিশুকে দেখা যায় মাটির খেলনা কিনতে সে জানায়, মাটির তৈরি হাড়ি -পাতিল কিনে বাড়ি গিয়ে খেলা করবে।

কথা হয় ঢাকা থেকে আসা রওশন পারভীন মিলিয়ার সাথে। তিনি জানান,'ছোট বেলায় তারাও পূজা, পার্বন, উৎসব বাবা মায়ের সাথে দেখতে যেত। তাদের বাবা মা তাদেরকে মৃৎশিল্পের সাথে পরিচয় করিয়েছিলো। বাঙ্গালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ধারণ করা মৃৎশিল্প যেন বিলুপ্ত না হয় সেজন্য তিনি তার সন্তানদের মাটির তৈরি খেলনা কিনে দিচ্ছেন। তার সন্তানরা হরেক রং এর মাটির খেলনা পেয়ে খুব আনন্দিত।

(এসএ/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২৩)