মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : প্রকৃতির চিরায়ত নিয়মে বছর ঘুরে ফের শীত সমাগত। রাজনৈতিক উত্তাপের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যে’র উত্তাপ সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারেও এখন দৃশ্যমান। চিন্তার ভাঁজ মধ্যভিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও হু-হু করে বেড়েই চলেছে সব ধরনের সবজির দাম। এখন শীতকালিন শাক-সবজির ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। গ্রামীন হাটেও আসতে শুরু করেছে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত লাইশাক,লাল শাক,সিম, লাউ, মুলা শাক ও কচুর মুকিসহ শীতকালিন নানা শাক-সবজি। পাশাপাশি দূরের জেলাগুলো থেকেও মৌলভীবাজার জেলার ছোট-বড় হাটগুলোতে স্বাভাবিক সর্বরাহ রয়েছে সবজির। তবুও কেন উত্তাপ ছড়াচ্ছে সবজির বাজার এমন প্রশ্ন জনমনে। এমনিতেই সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যে’র অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস। তার উপর বেড়েই চলেছে সবজির দাম।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) মৌলভীবাজার শহরের সবজির পাইকারী আড়ৎ, পশ্চিমবাজার ও চৌমুহনা এলাকার টিসি মার্কেটসহ শহরের সবজির খুচরা বাজার ঘুরে চোখে পড়ে বাজারের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির চিত্র।

এতে দেখা যায় বাজারে আসা শীতকালীন লালশাক আড়ৎে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা, সিম আড়ৎে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত , বেগুন ৮০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, ফুলকপি আড়ৎে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। কোথাও আবার বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতেও। টমেটো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাইশাক ৭০ টাকা, মুলার শাক ৭০ টাকা, বাঁধাকপি আড়ৎে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, আলু ৫৬ টাকা, কিছুদিন আগেও পুঁইশাকের কেজি ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে। সেই পুইশাক বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে , কড়লা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ ছোট থেকে মাঝারী আড়ৎে ৪০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ১০০ টাকা পর্যন্ত , কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, গত বৃহস্পতিবারে ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ হলেও একদিনের ব্যবধানে শনিবার ১৫ টাকা কেজিতে বেড়ে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৩০ অক্টোবর) ১০০ টাকা কেজিতে পেয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। ঝিঙে আড়ৎে ৪৫ টাকা হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা ও পেঁপে ৪০ টাকা।

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সাধারণ ত্রেতারা দায়ি করছেন সিন্ডিকেটকে। পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের অভাবও রয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের দাবি শাক-সবজির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত বাজার মনিটরিং। তাতে হয়তো কিছুটা হলেও বাজারের স্থিতিশিলতা ফিরবে।

ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সবজির বাজার সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে, যার কারণে ভরা মৌসুমেও যেসমস্ত সবজি মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে থাকার কথা ছিলো যেমন গতবছরের চেয়ে এবছর মুকি, লাউ, ঢেঁরশসহ অন্যান্য সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। আমার মনে হচ্ছে প্রান্থিক কৃষক নায্যমূল্য পাচ্ছেনা, সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে আসছে সবজি, যার কারণে ভুক্তভুগি হচ্ছে সাধারণ কৃষক ও ক্রেতা। তিনি বলেন, এখানে সরকারের বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন।

সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম জুনেদ বলেন, সবজিসহ দ্রব্যমূল্যর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে এক প্রকার নিরব কান্না চলছে। এটি দেখার কেউ নেই যেন মনে হচ্ছে। বাজারে কোন নিয়মের তোয়াক্কা করছেনা কেউ। যে যেভাবে পারছে ইচ্ছে মতো দাম আদায় করছে। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তার অধিকার অধিদপ্তরের নজরদারী প্রয়োজন।

মৌলভীবাজার শহরের পাইকারী সবজি আড়ৎ তাজুল ভান্ডার এর দ্বায়িত্বে থাকা শামীম আহমদ বলেন, গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে প্রতিটি সবজি পণ্য’র দাম একটু বেশি। তবে খুচরা বাজারে মনিটরিং না থাকায় যে যেভাবে পারছে সেভাবে পণ্য বিক্রি করছে। এটা এক প্রকারের জুলুম। তিনি মনে করেন, মনিটরিং হলে বন্ধ হবে এগুলো।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক
মো: শফিকুল ইসলাম পেয়াজ ও সবজি পণ্য’র দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে দ্রুতই বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী বলেন, বাজারে পেয়াজসহ সবজি পণ্য’র অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে শীঘ্রই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(একে/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০২৩)