টাঙ্গাইলে আগাম সবজি চাষে কৃষকের মুখে সফলতার হাসি
মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেলায় চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্চেন কৃষক। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা কোথাও জমিতে বীজ বপন করছে। আবার কোথাও গাছে আসা সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে আগাম সবজি বিক্রি করে সফলতার মুখ দেখছেন।
কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন। শীতকালীন সবজির সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা করা গেলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন- এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলার ১২টি উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছরে জেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। কোনো কোনো এলাকার জমির সবজি বাজারজাতও করা শুরু হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা কাঙ্খিত সাফল্যের মুখ দেখছেন।
সূত্রমতে, গত বছর জেলায় প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল। এসব সবজি বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হয়েছিল। এ কারণে চলতি বছর শীত শুরুর অনেক আগেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউসহ শীতকালীন সবজি চাষ চাষ হয়েছে। কৃষকরা কোথাও জমিতে সবজির চারা রোপন করছেন। কোথাও নতুন গাছে আসা সবজির পরিচর্যা করছেন। উপজেলার গ্রাম জুড়ে শুধু সবজির আবাদ চোখে পড়ে। ক্ষেত-খামারে সবজি পরিচর্যায় ভিষণ ব্যস্ত কৃষকরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ’ শ’ বিঘা জমি জুড়ে শীতের হরেক রকম সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। অধিকাংশ এলাকায় বাড়ির আঙিনায়ও সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূলা, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটল, শিম, মিষ্টি-কুমড়া, চাল-কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, গাঁজর, লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাকসহ শীতের নানা রকমের শাক-সবজি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে এবার সবজির দাম বেশি। ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। শীতকালীন সবজি বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পভিত্তিকও চাষ হচ্ছে।
বিভিন্ন উপজেলার শীতকালীন আগাম শাক-সবজি চাষীরা জানান, পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে থাকেন। এতে তারা সফলও হয়েছেন।
জেলার নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর গ্রামের কৃষক জাফর মিয়া জানান, সবজি চাষের ফলে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। তারা এখন স্বাবলম্বী। এখন তাদের শাক-সবজি বিক্রির জন্য হাট-বাজারে যেতে হয় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সবজি ক্ষেত থেকেই পাইকাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যায়। দামও ভালো পাওয়া যায়। মামুদনগর ইউনিয়নের প্রায় সব ধরণের শাক-সবজি চাষ হয়।
এখানকার শাক-সবজিগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এজন্য মামুদনগর গ্রামকে ‘বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি’র গ্রাম বলা হয়। এ শাক-সবজিগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাইকাররা সরবরাহ করেন।
একই এলাকার কৃষক আঃ রহিম জানান, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে চারার সেবায় ত্রুটি করা যায় না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় দিনই সবজি বিক্রি করা যায়। তাছাড়া চলতি মৌসুমে বাজারে সবজির দামও অনেক ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই তারা লাভজনক মনে করছেন।
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার আগ দেউলী গ্রামের কৃষক ওহাব মিয়া জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করেছেন। ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করছেন। দাম ভালো পেলে ৫০-৬০ হাজার টাকা ঘরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন তিনি সবজি ক্ষেতে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত।
প্রতি বছর নিয়মিত আবাদের মাধ্যমে সবজি বিক্রি করে তার সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি আরও সহযোগিতা করে তাহলে আগামি বছর আরও এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ বাড়িয়ে দিবেন।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারহানুল কবির জানান, শীতকালীন আগাম সবজির দাম বাজারে সব সময় বাজারে ভালো পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা বিভিন্ন ধরণের আগাম শাক-সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। শীতকালীন আগাম সবজিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় ও ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। তারা মাঠে থেকে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দেন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার দুলাল উদ্দিন জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শাক-সবজির আবাদ বাড়ানোর লক্ষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জেলায় এবার আগাম শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ চাষীদের সব ধরণের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, শীতকালীন সবজি চাষে নিয়মিত কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে- প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, ক্ষেতে বেড়া দেওয়ার জন্য নেট ও সবজি ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য ‘জার’ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ প্রকল্পের আওতায় বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে।
(এসএএম/এএস/নভেম্বর ১৪, ২০২৩)